ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর বিতর্ক, মাত্র ২৫% ভোটেই সরকার!

সজীবুল ইসলাম সজীব, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ০০:০০, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:০২, ১ জুলাই ২০২৫

নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর বিতর্ক, মাত্র ২৫% ভোটেই সরকার!

ছবি: সংগৃহীত

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে।

গত ৫ আগস্ট  শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর তার অধীনে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের’ লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন কমিশন নানা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছে। বিশেষ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতির দিকে নজর দিচ্ছে অনেক রাজনৈতিক দল, যেমন, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি এবং কমিউনিস্ট পার্টি। তবে বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসছে। প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই রয়েছে তারা।

পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র এই তিন ধরনের আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রয়েছে।

প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে পার্থক্য কী?

বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো।

ধরা যাক, বর্তমান পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনে মোট চারজন প্রার্থী চারটি দল থেকে নির্বাচন করছে। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিনজন প্রার্থীই ২০ শতাংশ করে ভোট পেলেন। আর চতুর্থ প্রার্থী পেলেন ২৫ শতাংশ ভোট।

বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী চতুর্থ প্রার্থীই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। অথচ ওই তিনটি দলের মোট ৬০ শতাংশ ভোট কোনো কাজে আসছে না। একইভাবে সারাদেশের অন্তত ২৯০ আসনে যদি একই হারে ভোট পেয়ে চতুর্থ দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করে, তাহলে মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে তারা সরকার গঠনসহ সংসদে একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য করবে। অথচ বাকি তিন দল মিলে ৬০ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকলো না সংসদে। এতে সংসদে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় না।

পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বড় অসুবিধাগুলো:

১. স্থিতিশীল সরকারের অভাব: পিআর সিস্টেমে সাধারণত একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। ফলে জোট সরকার গঠন করতে হয়, যা প্রায়ই অস্থির ও স্বল্পস্থায়ী হয়। সরকারের বারবার পরিবর্তনের কারণে নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

২. ছোট দলের অযৌক্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধি: ছোট ছোট দলগুলো অল্প ভোট পেয়েও সংসদে প্রবেশ করতে পারে এবং অতিরিক্ত দাবি তুলে বড় দলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. জবাবদিহিতার অভাব: পিআর সিস্টেমে প্রতিনিধিরা সাধারণত একটি দলীয় তালিকা থেকে নির্বাচিত হয়, সরাসরি নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের দ্বারা নয়। ফলে তারা স্থানীয় জনগণের চেয়ে দলীয় নেতাদের প্রতি বেশি জবাবদিহি থাকে।

৪. ভোটারের বিভ্রান্তি: পিআর সিস্টেম অনেক সময় জটিল হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন একাধিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, বা তালিকা ও অগ্রাধিকারভিত্তিক ভোট প্রয়োগ করতে হয়। এতে অনেক ভোটার বুঝে উঠতে পারে না কীভাবে ভোট দেবে।

৫. চরমপন্থী বা ধর্মীয় দলগুলোর প্রবেশাধিকারের সুযোগ: অল্প পরিমাণ ভোট পেলেও চরমপন্থী বা বিতর্কিত আদর্শের দলগুলো সংসদে প্রবেশ করতে পারে, কারণ আসন বণ্টন হয় ভোটের আনুপাতিক হারে।

শহীদ

×