
ছবি: সংগৃহীত।
আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় পুরুষদের জীবনে রয়েছে চাকরির চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব এবং নিজের সুস্থতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষই স্বাস্থ্য নিয়ে তখনই চিন্তা করেন যখন শরীরে সমস্যা দেখা দেয়—যেমন অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজন বাড়া, মনোযোগের ঘাটতি বা মানসিক চাপ।
এই সমস্যাগুলো আসলে দেহ ও মনের সতর্ক সংকেত। তবে সুস্থতা ফেরাতে বড় পরিবর্তনের দরকার নেই। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি সহজ ও কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুললেই দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনের সুস্থতা ধরে রাখা সম্ভব।
আত্মন্তন ওয়েলনেস সেন্টারের চিকিৎসক ও সিইও ডা. মনোজ কুট্টেরি HT Lifestyle-কে জানান, প্রতিটি পুরুষের ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে নিচের ৫টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি:
১. যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন:
অনেকে যোগব্যায়ামকে ধীর বা নারীদের জন্য উপযোগী মনে করেন। কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের জড়তা, মাংসপেশির টান, ও ভঙ্গিমার সমস্যা বাড়তে থাকে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে এগুলো কমে যায়।
প্রাণায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, রক্তচাপ কমায়, ঘুম ভালো করে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। দিনে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় দিলেই ফল মিলতে শুরু করে। যেমন: ‘সুর্য নমস্কার’ দেহকে উষ্ণ করে, ‘অনুলোম-বিলোম’ মানসিক শান্তি আনে।
২. রেসিস্টেন্স ট্রেনিং বা ভারোত্তোলন:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের পেশি কমে যেতে থাকে, যাকে বলা হয় সারকোপেনিয়া। এটি শুধু শক্তি নয়, বিপাকক্রিয়া ও এনার্জির মাত্রাও কমিয়ে দেয়। তাই সপ্তাহে ২-৩ দিন পুশ-আপ, স্কোয়াট বা ওজন তোলার মতো ব্যায়াম করলে মাংসপেশি শক্ত হয় এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এ ধরনের ব্যায়ামে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ ও বিষণ্নতা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানো:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নিয়মিত পাজল, নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো—এ ধরনের কাজ মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।
মেডিটেশন, গ্র্যাটিটিউড জার্নাল লেখা বা বই পড়াও মন ও মস্তিষ্কের প্রশান্তি আনে এবং চিন্তাশক্তি বাড়ায়। এই ছোট ছোট অভ্যাসেই ভবিষ্যতের জন্য মস্তিষ্ককে সজীব রাখা সম্ভব।
৪. পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা:
যুবক বয়সে ফাস্টফুড সমস্যা না করলেও ৩০-এর পর শরীর তা আর সহজে নিতে পারে না। তাই এই বয়সে হরমোন, প্রতিরোধক্ষমতা ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত বাদাম, বীজ, রঙিন ফলমূল-শাকসবজি, লিন প্রোটিন, মাছ ও অলিভ অয়েল খেলে শরীর নিজেই নিজেকে মেরামত করে। ওমেগা-৩, জিংক, সেলেনিয়াম ইত্যাদি উপাদান হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুর জন্য দারুণ উপকারী।
৫. মন-প্রাণকে শান্ত রাখার জন্য সচেতনতা ও আধ্যাত্মিক চর্চা:
স্ট্রেস পুরুষদের ‘নীরব ঘাতক’। মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের অন্যতম কারণ। ধ্যান, প্রার্থনা, প্রকৃতিতে হাঁটাহাঁটি বা নিঃশ্বাসের অনুশীলন—এসব অভ্যাস মনকে প্রশান্ত রাখে, কর্টিসলের মাত্রা কমায় এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নিজের জন্য দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে উপকার পাওয়া যায়। যেকোনো একটা অভ্যাস—চুপচাপ বসে থাকা, কৃতজ্ঞতার ডায়েরি লেখা, বা শুধু গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া—হতে পারে পরিবর্তনের শুরু।
পুরো জীবনযাত্রা বদলে ফেলার দরকার নেই। বরং ধাপে ধাপে এই ছোট অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে ভবিষ্যতে শরীর ও মনের ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিজেকে ভালো রাখতে এখন থেকেই সময় দিন—ভবিষ্যতের আপনি তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন।
সূত্র: https://short-link.me/16adP
মিরাজ খান