জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নারায়ণগঞ্জকে আমরা আর কোনো পরিবারের কাছে বর্গা দিতে চাই না। কোনো গডফাদারের কাছেও দিতে চাই না। নারায়ণগঞ্জে যে সন্ত্রাসের অভয়রাণ্য তৈরি করা হয়েছিল আমরা সেই সন্ত্রাসের অভয়রাণ্যকে ভেঙে ফেলব। জাতীয় নাগরিক পার্টির যারা নেত্রী রয়েছেন তাদের বাসায় গিয়ে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আমরা কোনো হুমকিতে ভয় পাই না। শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মাসব্যাপী দেশ গড়তে, জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের পথসভায় যোগ দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পদযাত্রাটি বি বি রোড হয়ে চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিনের সভাপতিত্বে পথসভায় অংশ নেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক সামান্তা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু ওনারায়নগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের তত্ত¡বধায়ক মোহাম্মদ শওকত আলীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। এই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটা চরম উদাহরণ- এই নারায়ণগঞ্জ শহর, যেখানে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র সব মিলেমিশে একাকার। এই একই সিস্টেমে পুরা বাংলাদেশ এত বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। নারায়ণগঞ্জকে কিছু পরিবার বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রণ করেছে। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা, অর্থনীতি ও রাজনীতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তারা দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কায়েম করেছে এবং জনগণের অধিকার হরণ করেছে।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের কলেজরোড এলাকায় জুলাই পদযাত্রার তোরণে আগুন দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন নাহিদ। এনসিপির পদযাত্রা বন্ধ করতে জন আতঙ্ক তৈরি করতে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী এ কাÐ ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণঅভুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জে কতগুলো খুন হয়েছে আমরা জানি। কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জে ঠিক হচ্ছে না, সেই জবাব চাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মাফিয়াতন্ত্র, দখলদারিত্ব, গডফাদারতন্ত্র পুনর্বাসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ব্যবসাগুলো পুনর্বাসিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। জুলাইয়ের শহীদ পরিবারগুলোর বাসায় গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলা করা পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছিল, আমরা এই অভয়ারণ্য ভেঙে ফেলব।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জকে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র থেকে মুক্ত করে জনতার নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে হবে। আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জ কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া পর্যন্ত কোনো ফ্যাসিস্ট ঢুকতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ তৈরি করেছিল এবং ঢাকাবাসীকে রক্ষা করেছিল। এদিকে, নারায়ণগঞ্জ আর ওদিকে সাভার-আশুলিয়া, প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল বলেই ঢাকার জনগণ রাজপথে নেমে আসতে পেরেছিল। গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ জেলায় ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।
গত বছর ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির স্মৃতিচারণ করেন তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ কেবল বন্দরের জন্য নয়, পাটশিল্প ও শ্রমিকদের এই নারায়ণগঞ্জ বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সে শ্রমিকদের জন্য ভালো পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারিনি। গণঅভ্যুত্থানের পরে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রটেক্ট করতে হবে এবং মাফিয়াতন্ত্রকে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমরা উল্টো ঘটনা ঘটতে দেখছি। মাফিয়া ব্যবসায়ীদের প্রটেক্ট করা হচ্ছে আর ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের তাড়নায় ব্যবসা করতে পারছে না।
এনপিসির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা এখানে সেই মানুষরাই এসেছি যারা জুলাইয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কোনো সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করে লাভ হবে না। ভারতীয় সকল এজেন্ট আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এরা ভারতীয় দল। কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর কোনো রাজনীতি করার সুযোগ নেই। নীতিগতভাবে আমরা দেশ পরিচালনা করতে যে কার্যক্রম শুরু করেছি তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জায়গাতেও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের জায়গা হবে না। দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের স্বপ্ন পূরণ হবে আমাদের মৃত্যুর পর। হাসিনার সময় যারা পয়সার জন্য নিজের মগজ বিক্রি করে দিয়েছিল তারা জ্ঞান পাপী। আমরা শুরু করেছি আপনাদের শেষ করতে হবে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের সুপার মার্কেটে এনসিপির পথসভায় বক্তব্য দানকালে নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহŸায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সামনে আরেকটি লড়াই আছে। কর্মীদের সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লড়াইয়ে মুন্সীগঞ্জবাসীকে পাশে চাই। গোপালগঞ্জে হামলা হয়েছে। কিন্তু আরও ১০ জায়গায় হামলা হলেও আমাদের দমন করা যাবে না। এসময় মুন্সীগঞ্জের নদীভাঙন, অবৈধ বালু দখলসহ নানা অনিয়ম বন্ধে কাজ করার আশ্বাস দেন এই নেতা। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ফ্যাসিবাদ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
সভায় সারজিস বলেন, ফ্যাসিবাদ নির্মূল না হলে দেশ স্বাধীন হবে না। শুধু গোপালগঞ্জে নয়, যেখানেই ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা থাকবে সেখানেই ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার আহŸান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, হাসিনার বিচার করতে হবে। তার মৃত্যুদÐ দেখে মরতে চাই।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন নেতা নির্ভর নয়, নীতি নির্ভর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী মাসের ৩ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়ব।