
ছবি: জনকণ্ঠ
প্রতি বছর ১৬ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব সাপ দিবস। সাপকে নিয়ে ভয়ভীতি দূর করা, তাদের সংরক্ষণ ও পরিবেশে সাপের ভূমিকা বোঝাতেই এই দিবসের আয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষ করে ফরিদপুরে, সাপ মানেই এখনও আতঙ্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন, বোয়ালমারী, সালথা, সদর, মধুখালী, নগরকান্দা ও আলফাডাঙ্গা এলাকায় রাসেল ভাইপার নামে এক বিষধর সাপের দেখা মিলছে, যা নতুন করে জনমনে ভয় ছড়াচ্ছে।
রাসেল ভাইপার দেখতে নিরীহ হলেও এর কামড় খুবই মারাত্মক। এই সাপের বিষে রক্ত জমে যায়, শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে, এমনকি মানুষ মারা যায়। ফরিদপুরে ইতোমধ্যে এই সাপের কামড়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে চরভদ্রাসনের হরিরামপুর গ্রামে ধরা পড়া বিশাল এক রাসেল ভাইপার মানুষকে বেশ ভয় পাইয়ে দেয়। অনেকে এখনও সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যায়, যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়।
আসলে সাপ আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। ইঁদুরসহ অনেক ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে কৃষকের উপকার করে। রাসেল ভাইপারও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। কিন্তু আমরা এখনো সাপ দেখলেই মেরে ফেলি, কারণ আমরা জানি না কীভাবে এদের সঙ্গে নিরাপদে সহাবস্থান করতে হয়। পরিবেশ ধ্বংস, বনাঞ্চল কমে যাওয়া আর মানুষ চরে বসতি গড়ে তোলার কারণে সাপের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে, তাই এরা মানুষের এলাকায় চলে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে শুধু ভয় পেলেই হবে না, আমাদের সচেতন ও প্রস্তুত হতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) রাখতে হবে, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। স্কুল-কলেজে সাপে কামড়ালে কী করণীয় তা নিয়ে সচেতনতামূলক ক্লাস চালু করা দরকার। ফরিদপুরে বন বিভাগের সহায়তায় সাপ ধরার প্রশিক্ষিত রেসকিউ টিম গঠন করা গেলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। শুধু বন বিভাগ নয়, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সাপ দিবস আমাদের শেখায়—সাপকে না মেরে, সচেতনভাবে বাঁচতে শেখা জরুরি। রাসেল ভাইপারের মতো বিষধর সাপও আমাদের একটা বার্তা দেয়, সেটা হলো—ভয় না পেয়ে প্রস্তুত হও। ফরিদপুরসহ সারা দেশের জন্য এখনই দরকার সচেতনতা, বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা আর প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের মনোভাব।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল জানান, সাপ পরিবেশের অমূল্য সম্পদ। সাপ শুধু মানুষের ক্ষতি করে না উপকারও করে। সাপকে নির্বিচারে হত্যা না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সাপ সংরক্ষণ করতে হবে।
লেখকঃ অভিজিৎ রায়, ফরিদপুর
সাব্বির