ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

রুমিন ফারহানা

আওয়ামী লীগকে কখনও আমার খুব ভদ্র মানুষের দল মনে হয় নাই

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪০, ১৮ জুলাই ২০২৫

আওয়ামী লীগকে কখনও আমার খুব ভদ্র মানুষের দল মনে হয় নাই

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, "আওয়ামী লীগকে কখনো আমার খুব ভদ্র মানুষের দল মনে হয় নাই। হ্যাঁ, ওদের কথা, ওদের আচরণ, ওদের অ্যারোগেন্স—সবকিছুই আমাকে খুবই শ্যাবি, খুবই শ্যালো একটা পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগকে আমার মনে হয়েছে।"

তিনি বলেন, "রাজনীতিতে অনেকগুলো নতুন ঘটনা কিন্তু ঘটেছে।  বাংলাদেশে ৫৩ বছরে আমরা এরকম ভয়াবহ মবের রাজত্ব অতীতে দেখি নাই। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানাভাবে ঘায়েলের চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরের কথা  একটা কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে।তখনও আমরা দেখেছি ফেসবুকে ‘রাজাকার শাবক’, ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ইত্যাদি নানা ট্যাংগিং; ভিন্নমতেই জঘন্য ভাষায় আক্রমণ; নারী হলে তার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশন। আশা করেছিলাম, অভ্যুত্থানের পরে একটা পরিবর্তন আসবে। আওয়ামী লীগ পালিয়েছে। নতুন রাজনীতি বাংলাদেশে সূচিত হচ্ছে—নতুন ধারার রাজনীতি, নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে। আশা করেছিলাম, আমরা নতুন কিছু পাবো।"

"কিন্তু আমরা দেখলাম, ১৫ বছরে যে নোংরামিগুলো হয়েছে, সেগুলোই আবার বিভিন্ন ফর্মে একইরকম। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য এআই এর সহায়তা নেওয়া, মিথ্যা প্রোপাগান্ডার সহায়তা নেওয়া—ইত্যাদি ইত্যাদি।"

তিনি আরও বলেন, গত নয় মাস ধরে আমরা ক্রমাগত মবোক্রেসি দেখেছি। আমরা মাজারে হামলা দেখেছি—বিচার দেখি নাই। আমরা নারীদের ওপরে সহিংসতা দেখেছি—কোনো ফয়সালা তেমন দেখি নাই। উল্টো আমরা দেখেছি, নারীর ওপরে যে ব্যক্তি মোরাল পুলিসিং করছে, উপদেশ দিচ্ছে, তাকে আবার গলায় মালা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনার ওপর আঘাত এসেছে। নাটক বন্ধ করা হয়েছে। মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করা হয়েছে। এবং সব জায়গাতেই আমরা সরকারের একটা নির্লিপ্ততা লক্ষ্য করেছি গত নয় মাসে। সেই ধারাবাহিকতায় মিটফোর্ডের ঘটনাটি ঘটে"।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, "প্রকাশ্যে দিবালোকে, ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে, একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল। আনসার ক্যাম্প মাত্র কয়েক গজ দূরে—তবু আনসার সদস্যরা কেন আসলো না?" 

রুমিন ফারহানা আরও অভিযোগ রেখে বলেন, "ঠিক তার দুদিন পরে জামায়াতের হাতে বিএনপির যুবদলের এক বহিষ্কৃত নেতার পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। এখন প্রশ্ন আসতে পারে—তিনি তো বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা। হ্যাঁ, অতীতে দুষ্কর্ম করেছেন, সে কারণে বহিষ্কার হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কি বাংলাদেশের একজন নাগরিককে পায়ের রগ কেটে হত্যা করা যাবে?"

রুমিন বলেন, "তার যা অপরাধ আছে, আপনি তাকে আইনের আওতায় আনবেন, বিচার করবেন। বিচারে শাস্তি হলে সে কারাগারে যাবে। কিন্তু আপনি তো তাকে হত্যা করতে পারেন না।"

 

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক স্লোগান নিয়ে তিনি বলেন, "আপনি যে স্লোগানের কথা বললেন—‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, বাংলা ছাড়’—এটা তো চিরাচরিত রাজনৈতিক স্লোগানের মতোই। কিন্তু এর আগে জনাব তারেক রহমানকে জড়িয়ে যেসব স্লোগান আমরা শুনেছি—সেই ভাষা , এই শব্দগুলো পাবলিকলি উচ্চারণ করা যায়, এটা তো খুবই অদ্ভুত।"

শেষে তিনি বলেন, "আমার সবসময় মনে হতো, খোলামেলাভাবে বলি, আওয়ামী লীগকে আমি কখনো ভদ্র মানুষের দল মনে করিনি। তাদের আচরণ, তাদের অ্যারোগেন্স—সবই আমাকে ‘শ্যাবি’, ‘শ্যালো’ মনে হয়েছে। কিন্তু আমরা তো একটা পরিবর্তনের আশা করেছিলাম। তাই না? কিন্তু এখন যারা নতুন রাজনীতি বলছে, যারা নতুন ধারার রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছে, তাদের মুখেও তো সেই একই ভাষা! এটা তো কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না।"

 

সানজানা

×