ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মুন্সীগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা: ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৪, ১৮ জুলাই ২০২৫

মুন্সীগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা: ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “গোপালগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দেশের আরও জেলায় হামলা হতে পারে। তারপরও আমাদের দমন করে রাখা যাবে না।” এনসিপি প্রধান বলেন, “মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ, যে লড়াই আমরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘোষণা করেছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী সেই লড়াই সমাপ্ত না করা পর্যন্ত আমরা থামবো না।”

 

 

শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিচার, সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা যে লড়াই শুরু করেছি তা চালিয়ে যাব। আমাদের সঙ্গে উপরওয়ালা আছেন, দেশের জনগণ আছেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামনে আরও একটি লড়াই আসছে, আমরা তার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি প্রাচীন সভ্যতার জনপদ মুন্সীগঞ্জ জেলার  বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, “এই জেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন, নদীভাঙন, সড়কপথের বেহাল অবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিমাসে নদীভাঙনে নতুন নতুন জলবায়ু উদ্বাস্তু সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবো। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এখানে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাই মুন্সীগঞ্জের মানুষকে জেগে উঠতে হবে এবং এলাকায় এলাকায় প্রতিবাদের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি কালজয়ী বাঙালি জ্ঞান তাপস অতীশ দীপঙ্করের নাম উল্লেখ করে বলেন, বহু গুনী, মেধাবী  মানুষ এবং প্রতিবাদী মানুষকে জন্ম দিয়েছে এই জনপদ। 

 

 

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “মুন্সীগঞ্জে হাজার হাজার মানুষ প্রবাসে থাকেন। আমরা প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে কথা বলেছি। অনেকেই বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নেই। আমরা বলি—প্রবাসীরাও দেশের অংশ। তাই তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন প্রমুখ। মুন্সীগঞ্জ জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক মাজেদুল ইসলামসহ কমিটির দায়িত্বশীলরা এবং  সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমানসহ অনেক উপস্থিত ছিলেন।  

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা যে সংস্কার চাই, তা কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়—এই সংস্কার বাংলাদেশের ও জনগণের পক্ষে। অতীতে আমরা দেখেছি, নেতাকে পূজা করা হয়েছে। কিন্তু নেতা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এদেশ আর নেতা-নির্ভর হবে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব মত ও রাজনৈতিক শক্তিকে পরিবর্তিত বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”

তিনি আরও জানান, “আগামী ৩ আগস্ট ‘জুলাই-আগস্ট ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ উপলক্ষে আবারও সবাইকে একত্রিত হতে হবে।”

গোপালগঞ্জে হামলার নিয়ে  সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। আমাদের সেই মুক্তির পথ অনেক বাকি। কিছুদিন আগে আমরা গোপালগঞ্জে গিয়েছিলাম—ভাবছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেছি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা হয়ে উঠেছে।”

সারজিস আলম বলেন, “শুধু গোপালগঞ্জ নয়—যে কোনো স্থানে ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসীরা থাকুক না কেন, দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে। যদি আমরা ফ্যাসিবাদের জায়গা করে দেই, তাহলে তারা আগামীর বাংলাদেশকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলবে।”

 

 

এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা উপলক্ষে শুক্রবার ভোর থেকেই মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে এবং বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত এই সভা চলে। পরে পদযাত্রাটি শীরতলক্ষ্যা তীরেরে নারায়ণগঞ্জের যায়।

ছামিয়া

×