ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বস্তির নিঃশ্বাস

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:৩৩, ১৭ জুলাই ২০২৫

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বস্তির নিঃশ্বাস

ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ১০ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর জন্য দীর্ঘদিনের এক প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। এখন থেকে তারা একাধিকবার মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে যেতে ও ফিরে আসতে পারবেন—রিএন্ট্রি ভিসা ছাড়াই। সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার সুবিধা চালুর ঘোষণা মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তি ও আনন্দের আমেজ তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক ও ফলপ্রসূ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলেই মালয়েশিয়া সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে পাঠিয়েছে। একইসঙ্গে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এই সংক্রান্ত একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাদের এ বছর সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা হয়েছে, তাদের আলাদাভাবে নতুন করে মাল্টিপল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। পূর্বের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসাগুলোই এখন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসায় রূপান্তরিত হবে।

এই ঘোষণাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা "ঈদের চেয়েও বড় সুখবর" হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসীরা রিএন্ট্রি ভিসা পেতে হয়রানি, দালালদের চড়া ফি, কোম্পানির অনুমতি ও ইমিগ্রেশন জটিলতার মধ্যে পড়তেন। একজন প্রবাসী জানান, “আমাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলেও দেশে যাওয়া সম্ভব হতো না, কারণ একবার মালয়েশিয়া ত্যাগ করলেই আবার ঢুকতে হলে নতুন করে রিএন্ট্রি ভিসা লাগতো। এখন মাল্টিপল ভিসা চালু হওয়াতে যেকোনো সময় দেশে যাওয়া-আসা করা যাবে, এটা যেন এক নতুন স্বাধীনতা।”

তিনি আরও বলেন, “ইমিগ্রেশনে ফি না দিয়েও এখন মাল্টিপল ভিসা সুবিধা পাওয়া যাবে, যা দালাল চক্রের অপতৎপরতার অবসান ঘটাবে। আগে যেখানে ২০০ থেকে ৪০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি দিতে হতো, এখন আর সেই সমস্যায় পড়তে হবে না।”

ভিসা সংক্রান্ত এই সংস্কারকে শুধুই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না দেখে প্রবাসী কল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন অভিভাষণ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাল্টিপল ভিসা সুবিধা শুধু প্রবাসীদের ব্যক্তিগত জীবনে স্বস্তি আনবে না, বরং বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মানবিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরও সুদৃঢ় করবে।

এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রাম সফল হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এখন আশা করা হচ্ছে, অন্য অভিবাসন গন্তব্য দেশগুলোও প্রবাসীদের জন্য এমন মানবিক নীতিমালা গ্রহণ করবে।

শেষ কথা: মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালুর এই উদ্যোগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। মালয়েশিয়ায় কাজ করা লক্ষাধিক প্রবাসী এখন নিশ্চিন্ত মনে নিজের দেশেও যাতায়াত করতে পারবেন, যা তাদের জীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 শেখ ফরিদ

×