
ড্রাগন হাতে চাষি আজিজুর রহমান
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী ডাকবাংলোর পাশে তীরনই নদীর পশ্চিম পাড়ে ২০ বিঘা জমিতে ৫২ হাজার ড্রাগন গাছ রোপণ করেছেন মোঃ আজিজুর রহমান। এবছর তার এই বাগান থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
মোঃ আজিজুর রহমান বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের ভানোর (দিঘিপাড়া) গ্রামের মৃত আব্দুল মোল্লার ছেলে। তিনি জানান, গত বছর ১২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেন এবং বেশ কয়েক একর জমিতে আমের বাগান করেন। কিন্তু আমে তেমন লাভ না হওয়ায় ছোট ভাই মোখলেসুর রহমানের পরামর্শে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হন। যশোর থেকে প্রায় ৫২ হাজার চারা নিয়ে প্রথমে ২০ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে বাগানটির দেখভাল করছেন তার ছোট ভাই মোখলেসুর রহমান। বাগানের বয়স এখন ১৩ মাস। ইতোমধ্যে প্রথমবারে ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। এবার প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বিক্রির আশা করছেন তারা।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন,বালিয়াডাঙ্গীর মাটি সব ফসলের জন্য অনেক ভালো, এজন্য ড্রাগনও খুব ভালো হচ্ছে। আমি আশা করব যে, কৃষকরা উচ্চমূল্যের ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হবে। আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসার মাঠ পর্যায়ে সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এবং আমরাও যারা আছি, তারাও সব সময় গিয়ে কৃষককে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
চাষি আজিজুর রহমান বলেন, এ বছর আমি ২০ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করছি। বাগান থেকে প্রথমবার ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি, এইবার আশা করছি প্রায় ২০ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে। প্রতিটি গাছ কিনেছি ১৮ টাকায়, এখন পর্যন্ত প্রতিটি গাছে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। প্রতি বিঘায় খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা। বালিয়াডাঙ্গীর মাটি ড্রাগন চাষের জন্য অনেক উপযুক্ত।
তার ভাই মোখলেসুর রহমান বলেন, এই বছর প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করব আশা করছি। ড্রাগন চাষে গোবরের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
বাগানে ঘাস নিড়ানোর কাজে নিয়োজিত শ্রীমতি বলেন, আমি ড্রাগন তুলেছি, আমি কামাকামি করছি, ঘাস কামাকামি করছি, যত কাজ ছে সব কামাকামি করছি। দিনে ৪০০ টাকা দিছে আর একবার ভাত খিলাছে।
বাগানে কাজ করা শ্রমিক দুলাল বলেন, এই বাগানে কাজ করি ১৯ জন। ৪ জন মহিলা আর ১৫ জন পুরুষ। আমরা ড্রাগন ফল তোলা, স্প্রে করাসহ অন্যান্য কাজ করি। প্রতিদিন তিন বেলা খাবারসহ ৪০০ টাকা করে পাই।
ফল প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, প্রায় ১ মাস ধরে এখানে কাজ করছি। আমাদের মজুরী নির্ভর করে প্যাকেজিংয়ের উপর। দিন ১২০০ টাকার মত পাই। এখান থেকে ড্রাগন ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
ড্রাগন ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, এখানকার ড্রাগন ফল টাটকা এবং খেতে খুব সুস্বাদু। ড্রাগনে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। ড্রাগন কিনে খাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
বাগান দেখতে আসা হোসেন আলী বলেন, শুনেছি বালিয়াডাঙ্গীতে ড্রাগন বাগান হয়েছে একটা। আমরা দেখতে এসেছি বাগানটা। আর এখান থেকে ড্রাগনও কিনেছি। অনেক বড় একটা ড্রাগন বাগান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এরকম লাভ জনক ব্যবসা যদি শুরু করা যায়, তাহলে বালিয়াডাঙ্গী অনেক উন্নত হবে।
তাসমিম