
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাঞ্চল্যকর গ্যাংস্টার হত্যাকাণ্ডে যিনি মূল ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন—তার নাম তাউসিফ বাদশাহ (২৬)। পাটনার বাসিন্দা এই যুবক শুধু একজন ভয়ংকর অপরাধীই নন, বরং একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত।
ঘটনার পরদিনই সামনে আসে তাউসিফের ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট—যেখানে তাকে বিলাসবহুল গাড়িতে পাটনার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়, পেছনে বাজছে হুমকিমূলক গান, ক্যাপশনে লেখা—‘King of Patna’।
সোশ্যাল মিডিয়া তারকা নাকি গ্যাংস্টার?
তাউসিফের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে অন্তত ১২৯টি শর্ট ভিডিও। প্রতিটি ভিডিওতেই রয়েছে ‘আধুনিক গ্যাংস্টার’ লুক—গর্জন করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, দ্রুত কাট আর অতি নাটকীয় সংলাপ। এক ভিডিওতে দেখা যায়, তাউসিফ একটি শিশুকে কোলে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। শিশুটির সঙ্গে তার সম্পর্ক স্পষ্ট নয়।
ফেসবুক বায়োতে লেখা—
‘যে জঙ্গলে তুমি সিংহ হয়ে ঘুরে বেড়াও, সেই জঙ্গলের নির্ভীক শিকারি আমি।’
হাসপাতালের মধ্যে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা
ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার। পাটনার অভিজাত প্যারাস হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়—পাঁচজন যুবক ধীর পায়ে আইসিইউর করিডোরে ঢুকছে। সামনে তাউসিফ—ঢিলা শার্ট, খোলা কলার, হাতে বন্দুক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় চন্দন মিশ্র নামে এক কুখ্যাত গ্যাংস্টারকে।
অন্যরা দ্রুত পালিয়ে গেলেও তাউসিফ একই শান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে বেরিয়ে যান হাসপাতাল থেকে।
২৪ মামলার আসামি ছিলেন নিহত চন্দন
চন্দন মিশ্রের বিরুদ্ধে অন্তত ২৪টি মামলা ছিল, যার মধ্যে ডজনখানেক হত্যা মামলা। ঘটনার সময় তিনি একটি হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করছিলেন, তবে চিকিৎসার জন্য জামিনে ছিলেন।
পুলিশের ধারণা, পুরনো গ্যাং রেষারেষির জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। চন্দন ও শেরু নামে অপর এক গ্যাংস্টার একসময় একই দলের সদস্য ছিলেন, কিন্তু ভাগলপুর জেলে থাকাকালীন তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে চন্দন আলাদা হয়ে গেলেও “শেরু গ্যাং” নাম ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ কারণেই তাউসিফের নেতৃত্বে চন্দনকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের দাবি।
‘শেরু গ্যাং’কে ঘিরে চক্র ভাঙার চেষ্টা
হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করে পুলিশ। পাটনা ও বক্সার জেলা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য সেফ হাউস ও স্থাপনায় চলছে তল্লাশি।
এই ঘটনায় ফের একবার আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতের অপরাধ জগতের নতুন রূপ—যেখানে অপরাধীরাই হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া তারকা।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব