ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

adbilive
adbilive
সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

দেশের শেয়ারবাজারে হতাশা বাড়ছেই। দিন যত যাচ্ছে হতাশার জালে আরও বেশি বন্দি হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংস্কারের ছোঁয়া সবখানে লাগলেও শেয়ারবাজার যেন আরও বেশি ডুবছে অনিশ্চয়তার জালে। পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন শেয়ারবাজার অংশীজনদের সঙ্গে। ফলে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে ফিরতে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বিগত সরকারের পতনের পর অন্য প্রতিষ্ঠানে পরির্বতন এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নতুন নেতৃত্বের অধীনে শেয়ারবাজারে সার্বিক সূচক কমেছে ১ হাজার ২ পয়েন্ট। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে নতুনভাবে শুরু করার পর আশার সঞ্চার করেছে সেখানে শেয়ারবাজারে ঘটেছে উল্টোটা। প্রতিনিয়ত দরপতনের কারণে আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বরং আরও অনাস্থা ক্রমশ বাড়ছে। এতে করে বাজার পতন হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিদিন রাস্তায় নামতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পরিবর্তনের পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ১০০২ পয়েন্ট। এ সময় বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার পুঁজি। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বাজার অংশীজনরা শেয়ারবাজারে টানা পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান শূন্যতাকে দায়ী করে আসছেন। শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীই নন শেয়ারবাজারের সব শ্রেণির মানুষ। এমনকি বিএসইসির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এই কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। অন্যদিকে তার অপসারণের দাবিতে নিয়মিত রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের এখন মূল দাবি হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ। যার পদত্যাগেই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস বিনিয়োগকারীদের। সম্প্রতি একাধিক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বলেন, মাকসুদ শেয়ারবাজার বোঝেন না। এটা শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা নয়। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারণ হওয়া উচিত। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর ২ দিন পর ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। এরপর গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান এবং ২৮ আগস্ট মো. আলী আকবর ও ৩ সেপ্টেম্বর ফারজানা লালারুখকে বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার ভালো হবে প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। উল্টো নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডিএসইর ডিএসইএক্স কমেছে ১০০২ পয়েন্ট। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুনর্গঠনের আগে শেয়ারবাজার অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ৫ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মূল্যসূচক বেড়েছিল ৬৭৫ পয়েন্ট। যেটি আর পরে টিকে থাকেনি। উল্টো বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করেন। অংশীজনেরা বলছেন, বিএসইসির নতুন নেতৃত্ব শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ও অংশীজনদের আশা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারের দিকে না তাকিয়ে তিনি শুধুমাত্র জরিমানা, বিও হিসাব বন্ধ রাখা, মিউচুয়াল ফান্ডের অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা শেয়ারবাজারকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়। এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আমরা (ব্রোকার) শেষ হয়ে গেছি। টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে অনেক ব্রোকার হাউসে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাঁটাই করেও টিকে থাকা যাবে না, যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে। খন্দকার মাকসুদকে বিএসইসিতে নিয়োগের দিন গত বছরের ১৮ আগস্ট লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ১০০২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯০২ পয়েন্টে। অর্থাৎ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে সূচকটি কমেছে ১০০২ পয়েন্ট বা ১৬.৯৭ শতাংশ। রাশেদ মাকসুদ বিএসইসিতে নিয়োগের দিন বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা ৮ মে নেমে এসেছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায়। এই সরল হিসেবে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে ৫৬ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে আরও অনেক বেশি। মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। যেগুলোর দর বাজার মূলধনে যোগ হয়েছে। এখন ওইসব ট্রেজারি বন্ড যদি বাজার মূলধন থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে অনেক বেশি। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। যেগুলোর বাজার মূলধন বা সিকিউরিটিজের দাম আছে ৫৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এসব দর মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে বাজার মূলধনে নতুন করে যোগ হয়েছে। এগুলো বাদ দিলে মাকসুদের নিয়োগের পরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। বৈঠকে অংশ নিতে দেশে ফিরছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ॥ বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে প্রশিক্ষণের মধ্যেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থায় আগামি ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে তাকে উপস্থিত থাকার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আগামীকাল রবিবার ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’ এর জন্য প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও বলেন, এ যাবতকাল বিএসইসির কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছে। সেক্ষেত্রে সহকারী পরিচালক, পরিচালকরা অংশ নেয়। এতে নির্বাহী পরিচালকদের নেওয়া হয় না। যদি নির্বাহী পরিচালকদের ট্রেনিং নিতে হয়, তাহলে তারা দীর্ঘ কর্মজীবনে কি শিখেছে, এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সেখানে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করা তো অকল্পনীয়। এটা পৃথিবীর কোনো দেশের এসইসির ক্ষেত্রে হয়েছে কি না, তা জানা নেই। তবে বাংলাদেশের বিএসইসির কোনো চেয়ারম্যানের এমন ট্রেনিং নিতে দেখা যায়নি। এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের সিইও বলেন, রাশেদ মাকসুদের ট্রেনিংয়ের দরকার আছে। যেহেতু উনার শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞানের অনেক ঘাটতি রয়েছে।

নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব ॥ গভর্নর

নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব ॥ গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির ধারাবাহিকতা ও সরকারি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে দেশে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নারী উদ্যোক্তাদের সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। গভর্নর বলেন, ‘আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপি আর অন্যদিকে বলি মূল্যস্ফীতি কমছে নাÑ তা হলে তো হবে না। আমাদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমছে, তবে সময় লাগছে। ধীরে ধীরে এটি আরও কমে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ, এখন তা নেমে এসেছে সাড়ে ৮ শতাংশে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি, এখন তা প্রায় ৯ শতাংশ। আমরা আশাবাদী সঠিক নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরও কমানো সম্ভব।’ নারীদের অগ্রগতির প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘নারীদের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। ঋণ নিতে গিয়ে তারা এখনো নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-বোনদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হতো, এখন তা সময়োপযোগী নয়। নারীদের রান্নাঘর থেকে বের করে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে যুক্ত করতে মানসিকতার বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীদের হাতে যাচ্ছে, এটি যথেষ্ট নয়।’ নারীদের ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ঋণ দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফান্ড বাড়িয়ে নয়, বরং নারীদের অধিকার বিবেচনায় নিয়েই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, তাদের আর্থিক সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা। উল্লেখ্য, সিএমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এই চার দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মেলা চলবে ১১ মে পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা পণ্য নিয়ে অংশ নিয়েছেন। শেষ দিনে ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হবে।