
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ওয়ারেন বাফেট আবারও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর অগাধ আস্থার কথা জানিয়েছেন। বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় তিনি বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে ভাগ্যবান দিনটি ছিল যেদিন আমি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি।”
গত শনিবার (৪ মে) বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় এক শ্রোতা বাফেটকে প্রশ্ন করেন, বর্তমান সময়ের “গুরুত্বপূর্ণ ও বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের” পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে হতাশ-এমন সময় কি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন প্রয়োজন?
উত্তরে ৯৪ বছর বয়সী বাফেট বলেন, “আমরা সবসময় পরিবর্তনের মধ্যেই থাকি। দেশ নিয়ে সমালোচনার অনেক কিছু সবসময়ই থাকবে। কিন্তু আমি ভাগ্যবান যে আমি এই দেশে জন্মেছি। তখন বিশ্বের মাত্র ৩% জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হতো। আমি শুধু ভাগ্যবান ছিলাম-সাদা হয়ে জন্মানো সহ আরও অনেক দিক থেকেই।”
যুক্তরাষ্ট্রে এখনো কেন আস্থা রাখেন বাফেট?
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকটের সময়ও বহু বিনিয়োগকারী মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং S&P 500 সূচক প্রায় ৫০% পড়ে যায়।
সে সময়, ২০০৮ সালে, নিউইয়র্ক টাইমসে “Buy American. I am.” শিরোনামে একটি চিঠি লিখেছিলেন বাফেট। তাতে তিনি বলেন, যদিও স্বল্পমেয়াদে বাজার কীভাবে আচরণ করবে তিনি জানেন না, তবে দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের ঐতিহাসিক প্রবণতা অনুসারে উন্নতি করবে।
তিনি লিখেছিলেন, “দেশের সুস্থ ও মজবুত কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা সবসময়ই কিছু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাবে, কিন্তু ৫, ১০ বা ২০ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই নতুন মুনাফার রেকর্ড গড়বে।”
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাফেট বলেন, দীর্ঘ বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে যে, এমন পরিবর্তন আসলে একধরনের ধ্রুবক ব্যাপার।
“যদি কেউ মনে করেন, ১৯৩০ সালে আমার জন্মের পর যুক্তরাষ্ট্র আর পরিবর্তন হয়নি, তাহলে তিনি বাস্তবতা বুঝছেন না। আমরা মহামন্দা, বিশ্বযুদ্ধ, পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার-অসংখ্য কিছু পেরিয়েছি। তাই আমি হতাশ নই যে আমরা এখনো সব সমস্যার সমাধান করতে পারিনি,” বলেন তিনি।
বাণিজ্যনীতি ও বৈশ্বিক সমৃদ্ধি নিয়ে বাফেটের সতর্কতা:
সংক্ষিপ্তমেয়াদে কিছু উদ্বেগের কথাও স্বীকার করেন বাফেট। তিনি স্পষ্টভাবে কোনো প্রশাসনের সমালোচনা না করলেও, শুল্কনীতি সম্পর্কে সতর্কতা দেন। বলেন, এটি “যুদ্ধ ঘোষণার মতো” হিসেবে দেখা যেতে পারে।
“আমি মনে করি না এটা ঠিক, এবং এটা কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়,” বলেন তিনি। “বিশ্ব যত সমৃদ্ধ হবে, তা আমাদের ক্ষতির কারণ হবে না-বরং আমরাও সমৃদ্ধ হবো, এবং আমাদের সন্তানরা আরও নিরাপদ বোধ করবে।”
সবশেষে বাফেট মজা করে বলেন, “যদি আমি আজ জন্মগ্রহণ করতাম, তবে আমি গর্ভেই দরকষাকষি করতাম যেন আমাকে যুক্তরাষ্ট্রেই জন্মানোর অনুমতি দেওয়া হয়।”
সূত্র: https://shorturl.at/vO0oR
মিরাজ খান