
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আমদানি-নির্ভরতার চাপ এবং চলমান বাজার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অনেকের কাছেই নতুন কোনো উদ্যোগ শুরু করা কঠিন মনে হতে পারে। তবে ঠিক এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নতুন সম্ভাবনা। স্থানীয় চাহিদা, সৃজনশীলতা আর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনি চাইলে শুরু করতে পারেন ছোট পরিসরের একটি লাভজনক ব্যবসা যা হতে পারে আপনার পার্সোনাল ‘সাইড হ্যাসল’ কিংবা সময়ের সঙ্গে পরিণত হতে পারে পূর্ণাঙ্গ ক্যারিয়ারে।
২০২৫ সালকে ঘিরে এমন কিছু সম্ভাবনাময় ব্যবসা আইডিয়ার তালিকা প্রকাশ করেছে Entrepreneur ম্যাগাজিন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই এই আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নযোগ্য, যদি থাকে আপনার উৎসাহ ও সামান্য পরিকল্পনা। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন খাতে আপনার উদ্যোগ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
১. নোটারি সার্ভিস
নোটারি পাবলিক হিসেবে কাজ করার মানে হলো, আইনি বা চুক্তিভিত্তিক কাজে একজন স্বীকৃত সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকা। একটু পুরোনো ধাঁচের পেশা হলেও, মর্টগেজ, দলিল বা ডিপোজিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে এখনো নোটারি সার্ভিসের প্রয়োজন পড়ে। এটি উচ্চ আয়ের কাজ না হলেও শুরু করার পথে তেমন বাধা নেই। যেমন, লোন-সাইনিং নোটারাইজেশনের মতো সেবা দিয়ে আপনি নিয়মিত আয় করতে পারেন।
২. ল্যান্ডস্কেপিং ও লন কেয়ার
বিশ্বব্যাপী লন কেয়ার ও ল্যান্ডস্কেপিং খাতের বাজার কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলারের। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতের মূল্য পৌঁছাবে ৩৩৬ বিলিয়ন ডলারে। Inc. জানায়, একটি ল্যান্ডস্কেপিং কোম্পানি তার বার্ষিক আয় অনুযায়ী তিন থেকে ছয় গুণ দামে বিক্রি হতে পারে। গাছপালা ছাড়াও এই খাতে দেওয়াল সংস্কার, ঘাস বসানো বা বাউন্ডারি ফেন্সিংয়ের মতো নানা ধরনের কাজ রয়েছে।
৩. গ্রাফিক ডিজাইন
আপনি যদি Photoshop, Canva বা Illustrator-এর মতো সফটওয়্যারে দক্ষ হন, তাহলে নিজেই একটি গ্রাফিক ডিজাইন কোম্পানি গড়ে তুলতে পারেন। বিজনেস-টু-বিজনেস (B2B) সেবা হিসেবে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির জন্য নিউজলেটার, বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইট ডিজাইন বা অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট ডিজাইন করতে পারেন। চাইলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রিন্ট শপের সঙ্গে সমন্বয় করে সেবার পরিধিও বাড়াতে পারেন।
৪. যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি মেরামত
যারা টেকনিক্যাল কাজে আগ্রহী, তারা বাসার ফ্রিজ, ওভেন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এসব যন্ত্র মেরামতের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি চাইলে স্থানীয় অ্যাপ্লায়েন্স শপের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের ওয়ারেন্টি সার্ভিস পরিচালনা করতে পারেন, অথবা পুরনো ডিভাইস কিনে তা মেরামত করে বিক্রিও করতে পারেন। তবে, এই খাতে সফল হতে হলে গ্রাহক সংগ্রহে আপনাকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
৫. পোষাপ্রাণী পরিচর্যা
পোষাপ্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এই খাতে ব্যবসার সুযোগও। পেট সিটিং, গ্রুমিং, ডগ ওয়াকিং কিংবা পোষাপ্রাণী বোর্ডিং এসব কাজ শুরু করতে তেমন কোনো লাইসেন্স বা বড় বিনিয়োগের দরকার হয় না। অনেকেই যেখানে পোষা প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান নিছক ভালোবাসা থেকে, আপনি চাইলে সেটিকে আয়মুখী করে তুলতে পারেন।
৬. ইভেন্ট প্ল্যানিং
বিয়ে, জন্মদিন, কর্পোরেট পার্টি,বড় কোনো আয়োজন মানেই হাজারো খুঁটিনাটি। কেউ কেউ এই পরিকল্পনায় বিরক্ত হন, আবার কেউ কেউ একে উপভোগ করেন পুরোপুরি। আপনি যদি দ্বিতীয় দলে পড়েন, তাহলে ইভেন্ট প্ল্যানিং হতে পারে আপনার জন্য দারুণ এক ব্যবসার ক্ষেত্র। এমনকি ভ্যাকেশন প্ল্যানিংও এই খাতের আওতায় পড়ে,যেখানে আপনি হোটেল, ফ্লাইট, দৈনিক ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং জরুরি রি-বুকিংয়ের দায়িত্ব নিতে পারেন।
৭. কোচিং, ট্রেনিং ও কনসালটেন্সি
আপনার যদি কোনো বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে, তাহলে তা দিয়ে আলাদা কোম্পানি খোলার চেয়ে আপনি সরাসরি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। যেমন, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকলে হতে পারেন বিজনেস কনসালট্যান্ট, খেলাধুলা বা হস্তশিল্পে দক্ষতা থাকলে তা শেখাতে পারেন অন্যদের। অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষদের জন্য রয়েছে ক্যারিয়ার বা লাইফ কোচ হওয়ার সুযোগ। এমনকি শিক্ষার্থীদের টিউশন দিয়েও ভালো আয় হতে পারে।
২০২৫ সাল হয়তো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু সেই সঙ্গে এটা হতে পারে আপনার উদ্যোগের বছরও। নিজের দক্ষতা ও আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আপনি তৈরি করতে পারেন এক নতুন সম্ভাবনার গল্প।
আপনি কোন আইডিয়াটাকে বেশি সম্ভাবনাময় মনে করছেন?
সূত্র:https://tinyurl.com/5b34kjpf
আফরোজা