
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ সরকারি স্কুল শিক্ষক গত এক বছরে ChatGPT ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (AI) টুল ব্যবহার করেছেন—এমনটাই জানিয়েছে গ্যালাপ ও ওয়ালটন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের একটি নতুন জরিপ।
ডালাসের দ্বিভাষিক এক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত শিক্ষিকা আনা সেপুলভেদা একটি আকর্ষণীয় পাঠ পরিকল্পনা তৈরিতে ChatGPT’র সাহায্য নিয়েছিলেন। ফুটবলের সঙ্গে জ্যামিতির সম্পর্ক তুলে ধরার জন্য AI টুলটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাঁচ পৃষ্ঠার পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করে দেয়, এমনকি একটি থিমও সাজায়: “ফুটবলে সর্বত্রই জ্যামিতি—মাঠে, বলের মধ্যে, এমনকি স্টেডিয়ামের নকশাতেও!”
সেপুলভেদা বলেন, “AI ব্যবহারে শিক্ষকতা আমার জন্য একেবারে বদলে গেছে। এটি আমাকে পাঠ পরিকল্পনায়, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগে, এমনকি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে সহায়তা করছে।”
দেশজুড়ে শিক্ষকরা এখন AI-এর সাহায্যে কুইজ তৈরি, মূল্যায়ন, পাঠ পরিকল্পনা, এমনকি মূল্যায়ন ও প্রশাসনিক কাজও সহজে সম্পন্ন করছেন। প্রতি সপ্তাহে AI ব্যবহারকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা গড়ে ছয় ঘণ্টা সময় বাঁচাচ্ছেন, যা পেশাগত ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করছে।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয়ের ও নতুন ক্যারিয়ারে প্রবেশ করা শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে বেশি AI ব্যবহার করছেন।
শিক্ষার্থীদের AI অপব্যবহার ঠেকাতে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য ইতোমধ্যে নির্দেশিকা চালু করেছে। তবে স্কুলভেদে এর প্রয়োগে রয়েছে পার্থক্য।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মায়া ইস্রায়েল বলেন, “আমরা চাই না শিক্ষককে বদলে দিক AI। শিক্ষকের মূল্যায়নের জায়গাটি অটুট থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নে AI ব্যবহার কার্যকর হলেও নানুকরণের প্রয়োজন যেখানে, সেখানে মানুষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত।”
AI ব্যবহারকারী ৮০ শতাংশ শিক্ষক বলছেন, এটি তাদের মূল্যায়ন, ওয়ার্কশিট তৈরি এবং প্রশাসনিক কাজের সময় বাঁচায়। ৬০ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, এটি শিক্ষার্থীদের উপযোগী উপকরণ তৈরি ও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মান উন্নত করেছে।
হিউস্টনের সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষিকা মেরি ম্যাকার্থি বলেন, “AI শুধু আমার পাঠদান নয়, আমার সাপ্তাহিক ছুটিকেও বদলে দিয়েছে।”
যদিও প্রাথমিকভাবে অনেক স্কুল ChatGPT নিষিদ্ধ করেছিল, এখন তারা এটিকে শিখন পদ্ধতিতে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। জরিপে অর্ধেক শিক্ষকই বলছেন, AI শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
কলোরাডোর ইংরেজি শিক্ষক ড্যারেন বারকেট বলেন, AI-এ লেখা কোনো অ্যাসাইনমেন্টে বানান ভুল থাকে না এবং জটিল শব্দ ব্যবহার হয়—এগুলোই ক্লু। তিনিও AI ব্যবহার করে পাঠ পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন তৈরি করেন।
শিকাগোর উপশহরের আর্ট শিক্ষিকা লিন্ডসে জনসন বলেন, তিনি কেবল AI টুলই ব্যবহার করেন যেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছে এবং কিশোরদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। তার মতে, “ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে, যাতে তারা নিজেদের দক্ষতা নিয়ে গর্ব করতে পারে।”
AI এখন শুধু শিক্ষকতার সহায়ক নয়, বরং সময় বাঁচানো, পাঠদানের মান উন্নয়ন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য তৈরির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে এর যথাযথ ও দায়িত্বশীল ব্যবহারে জোর দিচ্ছেন অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা।
শিহাব