
সংগৃহীত প্রতীকী ছবি
সবকিছু ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বয়স, মানসিক চাপ, ঘুম কম হওয়া, কিংবা পুষ্টির অভাবে হতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
এখানে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকর:
১. ফ্যাটি ফিশ (তৈলাক্ত মাছ)
স্যামন, টুনা, সার্ডিন এবং ম্যাকেরেলের মতো তৈলাক্ত মাছগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের (বিশেষ করে ডিএইচএ এবং ইপিএ) চমৎকার উৎস। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো মস্তিষ্কের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা উন্নত করে। ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জরুরি।
২. বেরি ফল (বেরিজ)
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং রাস্পবেরির মতো বেরি ফলগুলো ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। ব্লুবেরি বিশেষভাবে স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে সহায়ক বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
৩. হলুদ
হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন মস্তিষ্কের বিডিএনএফ (BDNF) নামক হরমোনের মাত্রা বাড়াতে পারে, যা নতুন মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
৪. ব্রোকলি
ব্রোকলিতে রয়েছে ভিটামিন কে এবং কোলিন, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন কে চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন যা মস্তিষ্কের কোষগুলোতে স্পাইঙ্গোলিপিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা স্মৃতিশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
৫. কুমড়ার বীজ
কুমড়ার বীজে উচ্চ পরিমাণে জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, কপার এবং আয়রন থাকে। এই খনিজগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। জিঙ্ক মস্তিষ্কের সিগন্যালিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ম্যাগনেসিয়াম স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা বাড়ায়, আর কপার এবং আয়রন স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে।
৬. ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটে উচ্চ পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যাফেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদানগুলো মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং মেজাজ ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়। তবে, চিনি ছাড়া ডার্ক চকোলেট (কমপক্ষে ৭০% কোকো) বেছে নেওয়া উচিত।
৭. বাদাম (বিশেষ করে আখরোট)
আখরোট এবং অন্যান্য বাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই থাকে। ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাস প্রতিরোধে সহায়ক। আখরোটকে 'মস্তিষ্কের আকৃতির ফল' বলা হয়, এবং এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
৮. ডিম
ডিম হলো ভিটামিন বি৬, বি১২ এবং ফোলেটের একটি চমৎকার উৎস। এই ভিটামিনগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিমে থাকা কোলাইনও মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
৯. গ্রিন টি (সবুজ চা)
গ্রিন টিতে ক্যাফেইন এবং এল-থিয়ানিন নামক দুটি উপাদান থাকে। ক্যাফেইন মস্তিষ্কের সজাগতা বাড়ায়, আর এল-থিয়ানিন মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গ বাড়িয়ে আরামদায়ক অনুভূতি এবং মনোযোগ উন্নত করে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
১০. কমলার মতো সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু বা বাতাবি লেবুর মতো সাইট্রাস ফলগুলোতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা মস্তিষ্কের কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করতেও সাহায্য করে।
কিছু অতিরিক্ত টিপস:
-
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অত্যাবশ্যক।
-
নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং নতুন মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
-
মানসিক ব্যায়াম: ধাঁধা সমাধান করা, নতুন ভাষা শেখা, বা নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন মস্তিষ্কের সচলতা বজায় রাখে।
-
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগা অনুশীলন করতে পারেন।
এই খাবারগুলো আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যোগ করে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলে আপনি সহজেই আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারবেন। তবে, যদি স্মৃতিশক্তি হ্রাস গুরুতর সমস্যা মনে হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাব্বির