
ছবি: প্রতীকী
আমরা অনেক সময় শুনি শূন্য মস্তিষ্কে শয়তানের বাসা। কথাটি শ্লেষপূর্ণ হলেও এর পেছনে একটি বাস্তবতা আছে। আজকের তরুণ সমাজে দেখা যাচ্ছে, অনেকে অতিরিক্ত চিন্তা করে ফেলেন। কেউ কেউ বলেন, “আমার মাথায় এত চিন্তা ঘুরে বেড়ায় যে তাড়াতে পারি না।” আবার কারও কারও মাথায় শুধু নেতিবাচক চিন্তা ঘুরপাক খায়, যেগুলোর কোন বাস্তব প্রয়োজন নেই এবং যেগুলো জীবনে কোনও কাজে আসে না।
এই ধরণের চিন্তাগুলোর একটা বিশেষ রূপ হচ্ছে অবসেসিভ কম্পালসিভ থটস। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি কোনও চিন্তা এড়িয়ে যেতে পারেন না, আবার সেটি করতে গেলে অনেক চাপ ও বিড়ম্বনার শিকার হন। যেমন, কেউ কেউ এক কাজ বারবার করেন — ৩ বার, ১০ বার এমনকি ২৫ বারও। তবুও মনে শান্তি আসে না। চিন্তাগুলো থেকে মুক্তি পেতে অনেকে নিজের মধ্যে ‘উল্টো মন্ত্র’ পাঠের মতো কিছু অভ্যাস তৈরি করেন, কিন্তু লাভ হয় না।
অন্যদিকে, কিছু মানুষ আছেন যারা মাথায় অকারণে আজে-বাজে চিন্তা আনেন এবং সেখানেই আটকে পড়েন। কখনো তারা জানেনও না কেন এমন চিন্তা মাথায় আসছে। এরকম অনেক চিন্তাকে বিশেষজ্ঞরা বলেন অটোমেটিক থটস। এগুলো মূলত উদ্বেগ বা এংজাইটি থেকে সৃষ্টি হয়। এ ধরনের চিন্তা মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ নষ্ট করে।
ফলে দেখা যায়, পড়াশোনা, কাজ বা নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও এই চিন্তাগুলো এসে মনোসংযোগ নষ্ট করে দেয়। কেউ পড়তে বসলে মাথায় অহেতুক চিন্তা এসে ঘুরপাক খায়। কেউ ব্যবসায় নামলে লাভ-ক্ষতির বাস্তব পরিকল্পনার চেয়ে শুধু ক্ষতির চিন্তাতেই ডুবে থাকেন। অনেকে নামাজে দাঁড়ালেও একাগ্রতা ধরে রাখতে পারেন না। এভাবে দিন দিন মন চঞ্চল, বিভ্রান্ত এবং হতাশায় ডুবে যেতে থাকে।
এই অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা অনেক সময় জেনারালাইজড এংজাইটি ডিসঅর্ডার (GAD), প্যানিক ডিসঅর্ডার বা ডিপ্রেশন-এর লক্ষণ হতে পারে। কারও কারও মধ্যে দেখা যায় প্যানিক অ্যাটাক, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় বা হঠাৎ আতঙ্কের ভাব। কেউ বদ্ধ জায়গায় থাকতে পারেন না — যেমন লিফট, বাথরুম, মসজিদ বা বড় মাঠে — যেখানে থাকলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে। কেউ কেউ আবার ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে আতঙ্কিত হন যে বাইরে থেকে কেউ তালা মেরে দেবে।
চিন্তার এই আধিক্য হতে পারে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে, যেমন বিষণ্ণতা, এংজাইটি, প্যানিক ডিসঅর্ডার বা পরীক্ষার চাপের মতো পরিস্থিতিগত কারণেও। এটি নিছক ‘চিন্তা বেশি করা’ নয়, বরং একটি মানসিক রোগের লক্ষণ, যা অবহেলা করলে বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে বুঝতে হবে কেন এ ধরনের চিন্তা আসছে। তারপরে প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং বা চিকিৎসার আশ্রয় নিতে হবে।
অতিরিক্ত চিন্তা শুধু মানসিক ভারসাম্যই নষ্ট করে না, জীবনের গতি, সম্পর্ক ও কর্মক্ষমতাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া জরুরি।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/ktguQcit_P4?si=cWWdfglQQ7cEFR37
এম.কে.