
আরিফা জাহান বিথী। একজন সাবেক নারী ক্রিকেটার। উত্তরাঞ্চলের রংপুরের মেয়ে। অসহায় মানুষজনকে সহায়তায় তিনি ব্রত। তার পথচলায় এখন অনেক অসচ্ছল পরিবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। বিথী ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।
রংপুরে ফিরে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নামে প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়েন বিথী। সেখানে কয়েকশ নারীকে বিনামূল্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। বিগত করোনা মহামারির সময় নিজের জমানো টাকা আর অন্যের আর্থিক সহযোগিতার সমন্বয়ে কয়েক হাজার মানুষের দুয়ারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, ফল, দুধ, ডিম ও হরলিকসসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তখন থেকে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা নারীদের সেবামূলক সহায়তা দিয়ে আসছেন তিনি। এরপর থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমকি গাজাতেও খাদ্য সহায়তা প্রেরণ কিেছলেন বিথী। ইতোমধ্যে তার সহযোগিতায় শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। গৃহহীন বৃদ্ধা মা-বাবা পেয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন বিথী। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি পবিত্র কুরআন শরিফও বিতরণ করে আসছেন বিথী।
এবারে নুন আনতে পান্থা ফুরানোর মতো যাদের অবস্থা এমন ১০ হাজারের বেশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে কোরবানির ঈদের দিন থেকে টানা চার দিন গ্রামে গ্রামে ছুটছেন আরিফা জাহান বিথী। ঈদের আনন্দ অসহায় মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বিতরণ করছেন কোরবানির মাংস। অসহায়, দুস্থ, এতিম, নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষসহ ভাসমান কেউই বাদ যায়নি বিথীর ভালোবাসা থেকে।
রংপুরের আউলিয়াগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পাটবাড়ি, আরাজি গুলাল বুদাই, নূরপুর, মহাদেবপুর, শ্যামাসুন্দরী, নিউ আদর্শপাড়া, রেল স্টেশন বস্তি, গুপ্তপাড়া ও জুম্মাপাড়া এবং কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর চরে থাকা অসহায় পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করছেন তিনি। বিভিন্নজনের সহযোগিতায় আটটি গরু ও সাতটি খাসি কোরবানি করে মানবিক এ কাজ করেছেন আরিফা জাহান বিথী। মানবিক এই সহায়তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিথীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরিফা জাহান বিথী বলেন, ঈদের চার দিনে আটটি গরু ও সাতটি খাসি কোরবানি করে বিভিন্ন এলাকার এতিম, অসহায়, দুস্থ ও নদীর চরে বসবাসকারী পরিবার এবং বৃদ্ধ মা-বাবাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এবার অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের সঙ্গে এই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরেছি। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
শুধু ঈদ নয়, যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিথী বলেন, ঈদের দিনে হয়তো পরিবারের সঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু আমার পরিবারের সদস্যরাই আমার এসব কাজের সঙ্গে থাকেন। এ কারণে কষ্ট ভুলে থাকি। সত্যি বলতে পরিবারকে তেমন সময় দিতে না পারলেও পরিবারের সবাই আমার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমি ভাগ্যবান একসঙ্গে ১০ হাজারের বেশি পরিবার নিয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করছি। কোরবানির মাংস কাটাকাটি ও প্যাকেট করতে বিথীকে সহযোগিতা করছে তার নিজের গড়া উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন। মানবিক এ উদ্যোগে অংশ নিতে তার সঙ্গী হয়েছেন একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী। তাদের সঙ্গে নিয়েই ঈদের দিনগুলো অসহায় দুস্থ মানুষদের জন্য উৎসর্গ করেছেন বিথী। গত বছর ৫ হাজার মানুষের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করেন তিনি।
প্যানেল