ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

অনলাইন ব্যবসায় রেণু

লিখন আহমেদ

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২৬ জুন ২০২৫

অনলাইন ব্যবসায় রেণু

নারীরা এখন শুধু চাকরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। গ্রাম ও শহরের নারীদের মধ্যে এখন উদ্যোক্তার স্পৃহা বেশি দেখা যাচ্ছে। উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি অন্যান্য অবহেলিত নারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। চেষ্টার পর অধিকাংশই সফলতা পাচ্ছে। পরিশ্রম ধৈর্য নারীদের সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মফস্বলের নারীদের সফলতার পেছনে থাকে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা আর সংগ্রামের গল্প। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা দিন রাত পরিশ্রম করেন। অনেকের কটাক্ষ তিরস্কারও উপেক্ষা করতে হয় তাদের। কোনো কোনো নারীর সফলতার পেছনে পরিবারের সহযোগিতা থাকলেও অনেকেই পরিবার থেকেও তেমন সহযোগিতা পান না। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হয় তাদের। তবে যারা পরিবারের সাপোর্ট পায় তারা খুব সহজে সফলতা অর্জন করতে পারে। তেমনি এক নারী রমিছা খাতুন রেণু। যিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা হওয়ার। সফল না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর ধৈর্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 
রমিছা খাতুন রেণু উল্লাপাড়া উপজেলা সদরের ঝিকিড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। মেধাবী রেণু ২০১০ সালে এসএসসি ও  ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। রেণু ছোট বেলা থেকেই হাতের কাজে পারদর্শী ছিলেন। মেশিনে নকশীকাঁথা সেলাই মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। তবে ছাত্রজীবনে উদ্যোক্তার চিন্তা ছিল না কখনই। ২০১৫ উধুনিয়া ইউনিয়নের উধুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন অর রশিদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রেণু। বিয়ের পর পুরোপুরি সংসারি হয়ে ওঠেন তিনি। সংসারের পাশাপাশি টুকটাক হাতের কাজ করতেন। এক পর্যায়ে অলস সময় না কাটায় রেণু সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার। স্কুল শিক্ষক স্বামীকে তার উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জানালে পরিবারের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা পান তিনি। এরপর স্বামীর সহযোগিতায় শুরু করেন অনলাইনে ব্যবসায়। 
অনলাইনে খাঁটি মধুর ব্যবসায় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রেণুর স্বামী হারুন অর রশিদ চলনবিলের বিভিন্ন স্থান থেকে মৌয়ালদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করেন। তারপর সেগুলো বাড়িতে আনার পর রেণু নিজেই বোতল জাত, প্যাকিং লেভেলিং করেন। খুবই স্বল্প মূল্যে মানুষকে খাঁটি মধু খাওয়াচ্ছি এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রেণুর অনলাইনে মধুর ব্যবসার যাত্রা হয়। সংসারের নানান কাজের পাশাপাশি মধু বিক্রি জাত করা তার অন্যতম কাজ হয়ে ওঠেন। খুবই আগ্রহ আর উদ্দীপনা নিয়ে করতে থাকেন এ কাজগুলো। 
করোনাকাল থেকে তিনি উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সফলতা না পেলেও হাল ছাড়েননি তিনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর শ্রমের বিনিময়ে একদিন তিনি সফল উদ্যোক্তা হবেন এমন চিন্তা ধারণা থেকেই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 
কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা বাইরের কারও সহযোগিতা না নিয়েই রেণু শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তার যাত্রা। তবে প্রশিক্ষণ কিংবা অভিজ্ঞদের পরামর্শ পেলে আরও ভালো করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। 
উদ্যোক্তা রমিছা আক্তার রেণু বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার হাতের কাজের প্রতি আলাদা একটা নেশা ছিল। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি মেশিনে বিভিন্ন ডিজাইনের নকশীকাঁথা সেলাই থেকে শুরু করে মেয়েদের নানান রকম পোশাক তৈরিতে পারদর্শী ছিলাম। বিয়ের পর আর এসবে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সংসারের কাজ কর্মে এসব প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। এরপর দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। তখন আর পুরানো অভিজ্ঞতা আর কাজে লাগানোর সময় হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন পর নিজে থেকে কিছু করার চিন্তা মাথায় এলো। এসব বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনি অনলাইন ব্যবসা করতে বলেন। 
তখন থেকে শুরু করি অনলাইনে মধুর ব্যবসা। আমার স্বামী বিভিন্ন স্থান থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করেন সেগুলো আমি বাড়িতে বসে বিক্রয় উপযোগী করে গড়ে তুলি। মানুষ আমার পণ্য হাতে পেয়ে তা খাওয়ার পর সুনাম করছে এতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আশা করছি একদিন মানুষের এই সুনামই আমার ব্যবসায় উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। এখনো আমি পুরোপুরি সফলতা পাইনি তবে চালিয়ে যাচ্ছি আশা করছি একদিন অনলাইন ব্যবসায় সারাদেশের মধ্যে আমিও একজন হবো। অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের হাতে মধু পৌঁছে দিতে তা প্রস্তুত করছেন উদ্যোক্তা রেণু। 

প্যানেল

×