
শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী এবং দেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃত সুগন্ধি আতপ চাল 'তুলশীমালা' এখন সারাদেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। “পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে”—এই স্লোগানে জেলা প্রশাসন একে শেরপুরের ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
শত বছরের পুরনো এই জাতের চাল দেখতে ছোট, মিহি। রান্না হলে এর মোহময় সুবাস আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই একে ‘জামাই আদুরি চাল’ নামে ডেকে থাকেন। নতুন জামাই বা বিশেষ অতিথি এলে পোলাও, পায়েস কিংবা পিঠা-পুলি পরিবেশনের মাধ্যমে এখনও এই চাল দিয়ে আপ্যায়নের প্রচলন রয়েছে।
এক সময় শুধুমাত্র শেরপুরের পাহাড়ি এলাকা—নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদীর উঁচু জমিতে সীমিত পরিসরে এ ধানের চাষ হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ায় এখন জেলার সমতল ভূমিতেও কৃষকেরা তুলশীমালা ধান চাষ করছেন।
২০২৩ সালের ১২ জুন তুলশীমালা চাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্টস, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর থেকে ভৌগলিক নির্দেশক (GI) সনদ লাভ করে। সনদ অনুযায়ী, এটি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
জানা যায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ধান রোপণ করা হয়। অক্টোবর-নভেম্বরে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর মাসে ফসল সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ২.৫–৩.২৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত।
বাজারে তুলশীমালার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চালকল মালিকরা জানান, উৎপাদনের আগেই মিল পর্যায়ে আগাম বুকিং দিতে হয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় অনেক সময় চাল আসার সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়।
দেশের নানা অঞ্চলে সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হলেও তুলশীমালার গুণগত মান ও সুবাস একে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। এ কারণে এর কদর বেড়েই চলেছে।
সম্প্রতি একদল তরুণ উদ্যোক্তা ‘আহারা’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে এই চাল অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। তাদের ভাষায়, “জেলার মাটির ঋণ শোধ ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
বর্তমানে অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তুলশীমালা চাল বিক্রি করছেন। ফলে সারাদেশেই এই চালের কদর ও গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
Jahan