
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইটি কারণে জোর দিয়ে চাইছেন, বিশ্ব যেন তার এই দাবিকে বিশ্বাস করে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ হয়ে গেছে।
প্রথমত, তার পুরো প্রেসিডেন্সি তৈরি হয়েছে নিজের “শক্তিশালী নেতা” ইমেজকে জাহির করার জন্য—একজন সাহসী, অনন্য ও ভুল না করা নেতার আখ্যান গড়তেই এই প্রচেষ্টা। এই ইমেজকে চ্যালেঞ্জ করে এমন কোনো তথ্যই তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, যদি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় যে ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা রাখে কিংবা মার্কিন বোমা হামলার পর তাদের কর্মসূচি আবার চালু করার সক্ষমতা রাখে—তবে একটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠবে: তাহলে কী যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সামরিক হামলা চালাতে হবে? ভবিষ্যতে ইরানের সক্ষমতা বাড়লে তা ঠেকাতে কি আবার বোমাবর্ষণ করতে হবে? এর ফলে দীর্ঘ এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হবে, যা ট্রাম্প চায় না; সেই সঙ্গে এতে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়বে এবং তার MAGA ঘাঁটিও ক্ষুব্ধ হবে।
তাই ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা প্রতিক্রিয়াশীল ভাষায় ক্ষুব্ধ হচ্ছেন এবং মিডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, যারা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) একটি প্রাথমিক ও ‘নিম্ন আস্থার’ মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে—যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মূল উপাদান ধ্বংস হয়নি, বরং কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র।
ন্যাটো সম্মেলনে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন যে, ওই হামলা ছিল “খুব, খুব সফল”। তিনি বলেন, “এটিকে ধ্বংস বলা হয়েছিল। পৃথিবীর আর কোনো সামরিক বাহিনী এটি করতে পারত না।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ সিএনএন এবং নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এই সংবাদমাধ্যমগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করেছে যাতে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হয়—“তারা আমাদের সৈনিকদের ভাবনাকেও গুরুত্ব দেয় না।” এইরকম নাটকীয় উপস্থাপনাই তাকে ফক্স নিউজ থেকে সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আনার মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করেন।
হোয়াইট হাউস পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের একটি মূল্যায়ন তুলে ধরে, যেখানে বলা হয়—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘গঠনগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ এবং এটি ‘বহু বছর পিছিয়ে গেছে’। একইভাবে, সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফও বলেন, তাদের কাছে প্রমাণ আছে যে কর্মসূচিটি “গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তবে এসব মূল্যায়ন যতটা না ইরানের ক্ষতির কথা বলছে, ততটা জোর দিয়ে ট্রাম্পের অতিরঞ্জিত দাবিকে সমর্থন করে না।
ট্রাম্পের কৌশল নতুন কিছু নয়—তিনি প্রমাণ ছাড়াই নিজের আখ্যান তৈরি করেন, তা যত বড় দাবিই হোক না কেন। ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে তার জালিয়াতির মিথ্যাচার এ কৌশলের একটি উদাহরণ।
তাই যদি বিশ্ব বিশ্বাস করে যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর বিপরীত প্রমাণ দেওয়া উৎসগুলো অবিশ্বাসযোগ্য হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়—তাহলে ট্রাম্পের পক্ষে আর কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়ার একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ তৈরি হয়।
সূত্র: সিএনএন
মুমু