ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

পঞ্চাশ বছর পর পর্দায় ফিরছে ‘শোলে’—এবার দর্শক দেখবে যে দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছিল

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৮, ২৬ জুন ২০২৫

পঞ্চাশ বছর পর পর্দায় ফিরছে ‘শোলে’—এবার দর্শক দেখবে যে দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছিল

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে ৫০ বছর পর আবারও বড় পর্দায় ফিরছে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র ‘শোলে’। তবে এবার দর্শকদের জন্য রয়েছে এক নতুন চমক—ছবির মূল, সেন্সরে বাদ পড়া শেষ অংশ এবং কিছু কখনো না দেখা দৃশ্যও থাকছে এই সংস্করণে।

রামেশ সিপ্পির ১৯৭৫ সালের এই মহাকাব্যিক সিনেমার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করা সংস্করণটি ইতালির বোলোনিয়ায় বিখ্যাত ইল সিনেমা রিত্রোভাতো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হবে। উৎসবের সবচেয়ে বিখ্যাত মুক্ত আকাশের নিচে স্থাপিত পিয়াজা মেজোর স্ক্রিনে এটি প্রদর্শিত হবে, যা ইউরোপের অন্যতম বড় স্ক্রিন।

সালিম-জাভেদ জুটির লেখা এবং অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, জয়া ভাদুড়ি, সঞ্জীব কুমার এবং আমজাদ খান-এর (গব্বর সিং চরিত্রে) অসাধারণ অভিনয়ে ভরপুর এই চলচ্চিত্রটি ছিল মূলত ভালোর বিরুদ্ধে খারাপের এক মহাকাব্যিক লড়াই। রামগড় নামের কাল্পনিক গ্রামে এক প্রাক্তন জেলারের অনুরোধে দুই অপরাধী জয় ও বীরু গব্বরকে ধরতে আসে।

মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে এই সিনেমা একটানা পাঁচ বছর চলেছিল। পরবর্তীতে এটি বিবিসি ইন্ডিয়ার ‘মিলেনিয়ামের চলচ্চিত্র’ নির্বাচিত হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের জরিপে সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমার খেতাব পায়।

আরডি বর্মণের সঙ্গীত ও সংলাপের রেকর্ড এবং ক্যাসেট বিক্রি হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ। চলচ্চিত্রের সংলাপগুলো ভারতীয় সংস্কৃতিতে রীতিমতো প্রবেশ করে—বিয়েতে, রাজনীতির বক্তৃতায়, এমনকি বিজ্ঞাপনেও এই সংলাপগুলোর ব্যবহার হয়।

ধর্মেন্দ্র বলেন, “শোলে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।”
অমিতাভ বচ্চন স্মরণ করেন, “তখন বুঝতেই পারিনি যে এই ছবি ভারতীয় সিনেমায় এক যুগান্তকারী মুহূর্ত হয়ে থাকবে।”

এই নতুন সংস্করণে দেখানো হবে সেই আসল পরিণতি যেখানে গব্বর সিং মারা যায়—ঠাকুর তাকে লোহার কাঁটা লাগানো জুতো দিয়ে হত্যা করেন। তবে সেন্সর বোর্ড এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। ‘আইনের বাইরে গিয়ে এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিশোধ নেওয়ার বার্তা’ ও ‘অতিরিক্ত হিংসাত্মক দৃশ্য’ তাদের মনঃপূত হয়নি।

তখন জরুরি অবস্থা চলছিল, সেন্সরের ছিল অস্বাভাবিক কড়াকড়ি। ফলে নির্মাতাকে আবার শুটিং করতে হয়, শেষ মুহূর্তে রামনগরামের পাহাড়ে গিয়ে নতুন দৃশ্য ধারণ করতে হয়। নতুন পরিণতিতে গব্বরকে হত্যা না করে ধরে ফেলে পুলিশ।

৩ বছরের লম্বা পুনর্গঠন অভিযানের নেতৃত্ব দেয় ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। মূল ৭০ মিমি প্রিন্ট হারিয়ে যায়, ক্যামেরা নেগেটিভও ছিল প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২২ সালে পরিচালক রামেশ সিপ্পির ছেলে শেহজাদ সিপ্পি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

মুম্বাইয়ের এক গুদামে সংরক্ষিত ফিল্ম ক্যানগুলো থেকে উদ্ধার হয় মূল ৩৫ মিমি ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ। এছাড়া, যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া রিল এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট ও ইতালির ল’ইমাজিন রিত্রোভাতা-র সহায়তায় মিলিয়ে-মিশিয়ে ছবিটি আবার জীবন্ত করা হয়।

চলচ্চিত্রটি মুক্তির শুরুতে তেমন সাড়া ফেলেনি। ফিল্মফেয়ার বলেছিল, এটি "একটি ব্যর্থ পাশ্চাত্য অনুকরণ।"
অনুপমা চোপড়া তাঁর বইয়ে লেখেন, “প্রথম কয়েকটি প্রদর্শনীতে দর্শক ছিল চুপ—না হাসি, না কান্না, না করতালি।”
তবে কয়েক সপ্তাহ পরেই, দর্শকদের মধ্যে সংলাপ মুখস্থ করার প্রবণতা শুরু হয়, লোকমুখে জনপ্রিয়তা ছড়াতে থাকে।

এক মাসের মাথায় পলিডোর ৪৮ মিনিটের সংলাপ রেকর্ড বের করে, আর সেখান থেকেই পাল্টে যায় সিনেমার ভাগ্য। গব্বর সিং হয়ে ওঠেন এক সাংস্কৃতিক প্রতীক। বিদেশি সমালোচকরা একে বলেছিলেন "ভারতের প্রথম কারি-ওয়েস্টার্ন"।

২০১৫ সালে পাকিস্তানেও মুক্তি পায় শোলে। এমনকি ৪০ বছর পরেও এটি সমসাময়িক বহু সিনেমাকে হার মানায়।
চলচ্চিত্র পরিবেশক শ্যাম শ্রফ বলেন, “যেমন বলা হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো অস্ত যায় না, শোলে’র ক্ষেত্রেও তাই।”

সূত্র: বিবিসি 

নোভা

×