
Natural Justice বা প্রকৃতির বিচার কিংবা রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বলে যে একটা কথা আছে, সেই ব্যাপারটা গভীরভাবে অনুধাবন করার একটা বাস্তব উদাহরণ আশা করি সবার সামনেই এখন ভিজিবল।
রাজনৈতিক হাজারটা ইবলিশি কার্যকলাপের পাশাপাশি হাসিনা ছিলো ব্যক্তিগতজীবনেও প্রচণ্ড পরশ্রীকাতর একজন ব্যক্তি। হাসিনার কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যেত, শুধু রাজনৈতিক সমালোচনা নয়, বরং ব্যক্তি খালেদা জিয়াও ছিলো তার বিশাল বড় হিংসার ক্ষেত্র।
সারাটাজীবন তার গেছে খালেদা জিয়াকে হিংসা করে। এজন্যই প্রায় প্রতিটা ভাষণেই, প্রতিবারই মুখ খুললেই খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলতো।
অপরদিকে খালেদা জিয়ার দিকে তাকান। এমনকি এই ০৫ আগস্টের পরও তার কোন পাবলিক স্পিচ (অন্তত দুইবার পাবলিক স্পিচ দিয়েছেন উনি) বা পাবলিকলি কথাবার্তা বলার সময়ও হাসিনাকে নিয়ে ব্যক্তিগত কোন আক্রমণ নাই, নোংরা কোন ইঙ্গিত নাই- নাথিং, সিম্পলি নাথিং!
খালেদা জিয়ার এই জেশ্চারে বোঝা যায়, উনার কাছে হাসিনার স্রেফ কোনই ভ্যালু নাই। এইযে এইভাবে ইগনোর করতে পারেন, এর ভেতর ব্যতিক্রমী একটা মজা আছে। শিক্ষণীয় ব্যাপার তো আছে বটেই।
হয়তো হাসিনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন- দেখ, তুই শয়নে-স্বপনে আমার নাম উচ্চারণ করে কটু কথা না বললে তোর পেটের ভাতই হজম হতো না, অথচ আমার কাছে তোর এক পয়সারও দাম নাই! হাসিনার অস্তিত্বই হয়তো খালেদা জিয়ার কাছে ম্যাটার করে না।
আমাদের সমাজে একটা প্রবাদ আছে, "চোরের মা'র বড়ো গলা"- যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে শেখ হাসিনা, তথা গোটা শেখ পরিবার। যে ব্যাক্তি তসবিহ জপের মতো সারাক্ষণ খালেদা জিয়াকে এতিমের টাকা চুরির অপবাদ দিয়েছে, তারেক রহমানকে চোর বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলেছে- সেই খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূত সর্বশক্তি নিয়োগ করেও ষোলো বছরে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। অথচ মাত্র কয়েক মাসেই শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখলের প্রমাণ প্রকাশিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে- শেখ পরিবার মানেই চোর পরিবার। ব্যক্তিগত জীবনেও দেখবেন কারও ওপর পরশ্রীকাতর কেউ যখন সারাক্ষণ কারও পেছনে লেগে কুৎসা রটাতে থাকে, তার মনের ভেতরও এই সুপ্ত বাসনা থাকে অপরপক্ষ থেকেও তাকে নিয়ে সেইম এনার্জি নিয়ে যাতে চর্চা হয়। মানে একইরকম গুরুত্ব দেওয়া হয় আরকি।
কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ইগনোর করাটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ। কারণ কোন মানুষটা কেমন, তা অন্যরা ধীরে ধীরে বাই ন্যাচার বুঝতে পারে। নিজেকে প্রমাণ করার কোন দরকারই হয় না। বরং ইগনোর করার মাধ্যমেই তাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত জবাব দেওয়া হয়ে যায়!
খালেদা জিয়ার ভেতর এই রেয়ার গুণাবলি আছে। হাসিনার হাজারো ব্যক্তি আক্রমণ এবং কুৎসিত কথাবার্তা রটনার বিপরীতে উনি এভাবেই মুখ না খুলে নিজের ক্লাস বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন সবসময়। এটাই উনার ক্লাস, এজন্যই উনি এত গ্রেইসফুল।
আমার কাছে একটা কথা মনে হয় সবসময়, খালেদা জিয়ার আসলে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বড় একটা অংশে রাজনীতি করতে হয়েছে এমন একজন ব্যক্তির বিপরীতে, যে রীতিমতো একজন আনকালচারড, সাইকোপ্যাথ, ভয়ংকর লেভেলের নার্সিসিস্ট এবং মনস্টার।
যাইহোক, দিল্লির এক বাগান বাড়িতে লুটিয়েন হাউজে বসে বসে পলাতক মনস্টারটা যখন টিভিতে দেখতে পাচ্ছে- নিজেকে যেই দেশ, যেই শহর থেকে গাট্টি-বোচকাসহ পালিয়ে যেতে হয়েছিলো জনতার তাড়া খেয়ে, সেই একই দেশে, একই শহরে অন্য একজন এসে নামার পরে পুরো দেশের মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছে, প্রার্থনা পাচ্ছে- নার্সিসিস্ট ও ভীষণ পরশ্রীকাতর ওই মনস্টারটার মনের ভেতর তখন কেমন ঝড় বয়ে যাচ্ছে, ওই দৃশ্যটা মনে মনে চিন্তা করে বেশ আনন্দই পেলাম!
রিভেঞ্জ অব ন্যাচার, অর্থাৎ প্রকৃতির প্রতিশোধ। কেউ যদি আমাদের প্রতি জুলুম বা অন্যায় করে তাহলে আমরা তাকে ক্ষমা করলেও প্রকৃতি তাকে কখনো ক্ষমা করে না। আশা করি আমরা সবাই এই কথাটা মনে রাখবো।
মুমু