ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শেষ হলো আধ্যাত্মিক জোয়ারের লাখো প্রাণের মিলনমেলা

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪২, ৯ মে ২০২৫

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শেষ হলো আধ্যাত্মিক জোয়ারের লাখো প্রাণের মিলনমেলা

ছবি: জনকণ্ঠ

বগুড়ার মহাস্থানগড় স্মৃতির স্তম্ভ, বিশ্বাসের মিনার। হাজার বছরের প্রাচীন এই পুণ্যভূমি জেগে ওঠে বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার, যখন ধর্ম-বর্ণ-জাত-গোত্র পেরিয়ে লাখো মানুষ এসে মিশে যায় এক স্রোতে আধ্যাত্মিকতায়, ভালোবাসায়।


এ যেন কোনো এক অলৌকিক টান। হযরত শাহ সুলতান বলখী (রহ.)-এর মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই মিলনমেলা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং আত্মার খোরাক, ইতিহাসের পুনর্জাগরণ। বলা হয়, সাড়ে নয় শতাব্দীতে বলখ নগর থেকে আগত এই সুফি সাধক পরাজিত করেন হিন্দু রাজা পরশুরামকে এবং মহাস্থানকে করেন আলোর প্রদীপ। সেই বিজয়ের স্মৃতি আজও উজ্জ্বল এই মেলামঞ্চে।

রাতভর চলে মুর্শিদি, মারফতি, আধ্যাত্মিক ও বাউল গান জিকির আর ধ্বনির মূর্ছনায় ঢেকে যায় চারদিক। মাজার প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে যেন কোনো অদৃশ্য জগতের দরজা, যেখানে সাধু-সন্ন্যাসী আর জটাধারীরা হারিয়ে যান ধ্যানে, তন্ময়তায়। কেউ জিকিরে, কেউ গান-গজলে খুঁজে ফেরে চিরন্তন সত্য।


এ বছর আয়োজন ছিল আরও শৃঙ্খল, আরও প্রাণবন্ত। চারশতাধিক সদস্য নিয়ে গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা বলয়। নেতৃত্বে ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা, পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা (পিপিএম) ও ইউএনও জিয়াউর রহমান। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান জানান, “এবারের মেলায় ছিল না কোনো বিশৃঙ্খলা, ছিল না মাদক, ছিল শুধু শান্তি আর মিলনের ছবি।”


মাজারসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে গড়ে ওঠে অস্থায়ী বিপণিবিতান মিষ্টি, খাবার, বস্ত্র, খেলনা, নাগরদোলা আর জাদু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কটকটির দোকানগুলো যেন কেবল ব্যবসা নয়, ইতিহাস বিক্রি করেছে। বিক্রি ছাড়িয়েছে কোটির ঘর।

বছরের অন্যদিনগুলোতে যাদের দেখা মেলে না, তারাও এই দিন ফিরে আসেন মহাস্থানে। কেউ পুণ্য নিতে, কেউ চোখ ভিজাতে, কেউবা শুধু ইতিহাসের এই স্বর্ণরেখায় একটু স্পর্শ রেখে যেতে।


মহাস্থানগড় তাই শুধু এক জায়গার নাম নয়, এটি ইতিহাসের ছায়ায় গড়ে ওঠা বিশ্বাসের মঞ্চ, যেখানে প্রতি বছর মিলিত হয় হাজারো প্রাণ, শত শত সংস্কৃতি একটি ভালোবাসার জাগরণে।

রবিউল

×