
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রায় আট দশক ধরে, ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরের সাথে ক্রমাগত উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের শিকড় বেশ পুরনো এবং দীর্ঘ ইতিহাসে নানা ধরনের যুদ্ধ ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ কাশ্মিরে পর্যটকদের উপর আক্রমণের মাধ্যমে তীব্রতর হয়েছে, যার ফলে ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। এর পরবর্তী সময়ে, ৭ মে, ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরে মিসাইল হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত ৩১ জন প্রাণ হারায়। এরপর, ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরকে মিসাইল ও ড্রোন হামলার জন্য দোষারোপ করছে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, তবে এই দুই দেশের জন্ম ছিল অত্যন্ত সংঘর্ষপূর্ণ। পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত হয় - পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান, যা পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়। কাশ্মিরের ভাগ্য ছিল একটি প্রধান বিতর্কিত বিষয়, এবং কাশ্মিরে প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। এটি ১৯৪৮ সালে একটি সীমানায় বিভক্ত হয়ে শেষ হয়, যেখানে পাকিস্তান পশ্চিম কাশ্মির ও ভারত বাকি অংশ শাসন করতে থাকে।
১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তান মধ্যে সিন্ধু নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তি হয়। কিন্তু ১৯৬৫ সালে কাশ্মির নিয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলে উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করে এবং একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালে, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে, এবং ভারত এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তান পরাজিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত হয়। ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়, যা পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এক নতুন যুগে প্রবেশ করে।
১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে কাশ্মিরে বিদ্রোহ শুরু হয়, যেখানে ভারত সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থক হিসেবে দোষারোপ করে। ১৯৯৮ সালে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, যা বিশ্বকে অবাক করে দেয়। পরে, ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরের কারগিল সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হয়, যেটি এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার পরে দুই দেশের মধ্যে আরও উত্তেজনা দেখা দেয়। ২০০৮ সালে মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৬০ জনের বেশি নিহত হয় এবং ভারতের অভিযোগ ছিল যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
২০১৬ সালে উরি আক্রমণের পরে ভারত পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আস্তানায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় একটি আত্মঘাতী হামলা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪০ জন সৈন্যকে হত্যা করে, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও চরমে নিয়ে যায়। একই বছর, ভারত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সর্বশেষ এ বছরের ২২ এপ্রিল, পেহেলগাম শহরে এক সশস্ত্র আক্রমণে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়। এরপর ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরে ব্যাপক মিসাইল হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রায় শতাব্দীজুড়ে চলে আসছে এবং কাশ্মিরের বিতর্ক এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি থাকায়, এই উত্তেজনা বিশ্ব শান্তির জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
সূত্রঃ আল-জাজিরা
আরশি