
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা এমন একটি নীরব ব্যাধি, যা বহু মানুষকে আড়ালে আড়ালে কুরে কুরে খায়। অনেক সময় রোগী নিজেও বুঝতে পারে না, সে ডিপ্রেশনে ভুগছে। আর চারপাশের মানুষ এটিকে কেবল দুঃখ বা মন খারাপ বলে এড়িয়ে যায়। অথচ সময়মতো সচেতনতা না আনলে, এই মানসিক অবসাদ জীবনের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো চেনা ও বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপ্রেশনের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা অধিকাংশ রোগীর মধ্যে দেখা যায়। তবে এগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে সেই সাধারণ লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:
১. দীর্ঘদিন ধরে মন খারাপ থাকা:
ডিপ্রেশনের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ থাকা বা দুঃখ অনুভব করা। এটি দিনের বেশিরভাগ সময়জুড়ে থাকতে পারে এবং সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলতে পারে।
২. আগ্রহ ও আনন্দের অভাব:
যেসব কাজ আগে আনন্দ দিত বা আগ্রহ জন্মাত— যেমন প্রিয় শখ, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা ঘুরতে যাওয়া— এসবের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলা ডিপ্রেশনের বড় লক্ষণ।
৩. ঘুমের সমস্যা:
অনেক রোগী রাতে ঘুমাতে না পারার অভিযোগ করেন, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত ঘুমান। এই দুই বিপরীত আচরণই ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।
৪. ক্ষুধা ও ওজনের পরিবর্তন:
ডিপ্রেশনে কারো ক্ষুধা কমে যেতে পারে, ফলে ওজন কমে যায়। আবার কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়।
৫. ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা:
সারাদিন ক্লান্ত লাগা, সামান্য কাজেই পরিশ্রান্ত বোধ করা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা— এসবও ডিপ্রেশনের ইঙ্গিত দেয়।
৬. আত্মঅবিশ্বাস ও আত্মদোষারোপ:
নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, অতীতে ঘটে যাওয়া ভুল নিয়ে বারবার অনুশোচনায় ভোগা বা নিজেকে দোষ দেওয়া— ডিপ্রেশনের মধ্যে এগুলোও সচরাচর দেখা যায়।
৭. আত্মহত্যার চিন্তা:
সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষণ হলো মৃত্যুর কথা ভাবা বা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করা। এটি অবিলম্বে চিকিৎসা গ্রহণের সংকেত দেয়।
চিকিৎসা ও করণীয়:
ডিপ্রেশন একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ যেমন মনোরোগ চিকিৎসক বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত কথা বলা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ, শরীরচর্চা এবং ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখাও অনেক উপকারে আসতে পারে।
ডিপ্রেশনকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। একে "বিলাসিতা" বা "অলসতা" বলে অবজ্ঞা না করে আমাদের প্রয়োজন সহমর্মিতা, সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা। মন ভালো থাকলে জীবনও সুন্দর হয়— এই উপলব্ধিই হতে পারে মানসিক সুস্থতার পথে প্রথম ধাপ।
নুসরাত