ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

প্রেম, প্রতিবাদ ও পরাবাস্তবতায় প্রিন্স মাহফুজ

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৪ মে ২০২৫

প্রেম, প্রতিবাদ ও পরাবাস্তবতায় প্রিন্স মাহফুজ

 'কবির মতো স্রষ্টা' নাকি 'স্রষ্টার মতো কবি'—সেই কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না; শুধু একটাই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই—নিঃসঙ্গ না হলে দুনিয়া এবং কবিতা কোনোটাই ক্রিয়েট করা যায় না।

মাথায় কামারের আগুন
হাতে কুমারের কৌশল
আর হৃদয়ে কুমারীর প্রথম সঙ্গম দিয়ে—
—তোমার জন্য, প্রেমী, যে কবিতাটি ক্রিয়েট করেছি তার সাথে আমি কোনো অটোগ্রাফ পাঠাইনি, শুধু একটা দাগ পাঠালাম; এই দাগ নিয়েই চিরকাল আমি ডোমের ভূমিকায় মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমার মৃত্যু হলেও টুকে রাখো, আমি তোমার, হ্যাঁ, শুধুই তোমার নামের মধ্যে রয়ে যাবো।
যদিও পূর্বজন্মের কথা মনে আছে—এমন মানুষও ভুলে গেছে গর্ভ ভ্রমণের স্মৃতি, তবুও আমি আবার জন্মাবো তোমার গর্ভ ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে, তোমার নাম নিয়ে।
দেয়ালে 'ভ্রমরের ভ্রমণ' আর 'ভ্রমণের ভ্রম' যে ইল্যুশন ক্রিয়েট করেছে তাকে পাশ কাটিয়ে এই মর্গের সমস্ত লাশকে সামনে রেখে তোমায় চুমু খাবো, প্রিয়তমা। চুমু এমনই নিস্তব্ধ, এমনই নির্জন, এমনই একা—যেনো আমি যে চুমুটা তোমাকে খাবো—সেই চুমু আসলে একজন ঈশ্বর!
**
তুমি রুশ বিপ্লবের নায়িকা, ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ স্তন তোমার, যার বারুদভর্তি চোখে অতিরিক্ত মুগ্ধতা দিতে গিয়ে আমার খোদা দৃষ্টিক্ষমতা দিতে ভুলে গেলেন।
রক্তের স্রোতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা তুমি ফিলিস্তিনের মুমূর্ষু শিশু, সবুজাভ নাশপাতি চোখ তোমার, যার প্রেমিক একজন ইহুদি সৈনিক।
তুমি ঈশ্বরের সেরা সৃষ্টি—প্রচণ্ড মনোযোগ দিয়ে তৈরী করা শ্রেষ্ঠ কোনো মৃৎশিল্প—তোমার জন্য আমার দুঃখ হয়, নিনা—যে সৌন্দর্য আমি নিজ চোখে দেখতে পাই তোমাকে ভেবে, তুমি সামনে এলে—সেই একই সৌন্দর্য তোমার চোখ দেখতে পায় না, সেই সৌন্দর্য দ্যাখার জন্য তোমাকে আয়নার সম্মুখে দাঁড়াতে হয়। আয়নাকে ক্ষমা করো, আয়নাও তো মানুষ।
আমাকেও ক্ষমা করো, আমি মিথ্যা বলেছি, তুমি রুশ না, তুমি আসলে ফরাসী বিপ্লবের নায়িকা, হৃদয়ভর্তি আফ্রিকান ক্রাইসিস, তুমি তাকাতে পারছো না, অন্ধ হয়ে গেছো, পৃথিবী তোমার চোখের কোটরে আটকে গেছে।
**
গোলাপে আমার বিশ্বাস নেই, কবিতায় আছে। কবিতায় তোমার বিশ্বাস নেই, গোলাপে আছে।
এই প্যারাডক্সিক্যাল স্বভাবের কারণে জানি কিছুই হবে না, তবুও তোমাকে ভাবার মধ্যেই আমি এক স্বর্গীয় যন্ত্রণা অনুভব করি। মনে হয়: মাথার ভিতর ওয়াইন হাতে নিয়ে তোমার কোমড় ধরে নেচে বেড়াচ্ছি একটা সমস্ত জীবন।
আমি কামারের সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেখেছি: কীভাবে পেটের দায়, পরিবারের দায়ভার আর যাপনের প্রয়োজনে আগুনের সম্মুখে গোটা একটা জীবন পার করে দেয়। কামারকে তুমি নরকের ভয় দেখালে সে হাসবে, যেমন তোমার সঙ্গে একটা সকাল কাটানোর কথা বললে তুমি হাসো।
সমুদ্র/পাহাড় না, আমি আসলে যেতে চাই তোমার মগজে। কিন্তু তার আগে তোমাকে ঘিরে থাকা স্থান আর তোমার হৃদয়কে আবৃত করে রাখা স্তনের সাথে আমি পরিচিত হতে চাই। আমি দেখতে চাই: তোমার পায়ের তলার মাটিতে কী এমন উপাদান রয়েছে যা সমগ্র হৃদয়ে সুগন্ধি আর মাদকতা ছড়িয়ে দিতে পারে।
ভালোবাসায় আমার বিশ্বাস নেই, চুমুতে আছে।
চুমুতে তোমার বিশ্বাস নেই, ভালোবাসায় আছে।
টিজে টমাস আমাকে বলেছিলো, গড অব কিস। বাংলাদেশিদের কথা উড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু টমাস এখন আমেরিকায় থাকে, এখন কী তাকে বিশ্বাস করা যায়?
গোলাপে আমার বিশ্বাস নেই, টমাসে আছে।
**
রোমান্টিক প্রণয় প্রত্যাখ্যানের পথ ধরে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ—এই সামান্য বিষয়ে আমার এতই কান্না পাচ্ছে যে, সমুদ্রই আমার সামনে পর্যটক—বসে আছে পাহাড়ে হেলান দিয়ে।
আপনি কেন আমাকে ভালোবাসলেন না?
তুমি কেনো আমাকে চুমু খেলে না?
তুই কেনো আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস?
প্রত্যেকটা সম্বোধন আর প্রতিটা সম্মোহনে আমি তোর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি—ছড়িয়ে যাচ্ছি; যেনো তোমাকে ভালোবাসার মধ্যে স্বর্গের ব্যথা আছে, আছে নরকের আনন্দ।
অনেক খারাপ ব্যাপার তুমি মানতে পারোনি, তবুও সেগুলো তোমার জীবনে ঘটেছে। আমিও, ধরে নাও, তেমন কিছু।
শরীরকে যারা অস্বীকার করেছিলো গতকাল, আজ তাদের দেখলাম সরকারি মেডিকেলের যৌনবিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে মাছি তাড়াচ্ছে। তুমি আমাকে অস্বীকার করছো, এর অর্থ কী হতে পারে?
স্বরবর্ণ এমনই ক্ষমতাধর—সে মৃত'র পাশে দাঁড়ালে মৃতও হয়ে ওঠে অমৃত। তুমিও তেমন স্বরবর্ণ।
এসো, নিনা, আমার পাশে দাঁড়াও।
**
এসো, নিনা, আমাকে চুমু খাও
চুমু আসলে একটা এবস্ট্রাকট ব্যাপার। তোমার প্রত্যেকটা টেক্সট আমার কাছে চুমু। আবার দেখবে তোমার চুমু হয়তো কারো কারো কাছে শুধুই টেক্সট।
সরে এসো, নিনা, আমাকে আর চুমু খেও না
আমার জ্বর আসে। যখন ধর্মপ্রচারকের কাছে ওহী আসতো, শুনেছি তখন না-কি তাদের জ্বর আসতো। তোমার চুমুও কী তেমনই কোনো ওহী?
জন্মদিনের পোশাকে এসো—আমি ডোম হয়ে প্রেম দিয়ে তোমার শরীর ব্যবচ্ছেদ করবো আজ।
মনে হচ্ছে, তোমার পিঠে তুমি ছড়িয়ে দিয়েছো আমার ডাকনাম—আমি সেই নামের পাশে তোমার ছবি এঁকে, সেই ছবিটার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছি।
মনে হচ্ছে, তোমার পিঠে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবিতা এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে, শুধু রিএরেঞ্জ করা বাকি।
মনে হচ্ছে, আমার আঙুল আমি হারিয়ে ফেলেছি, নিনা, তোমার চুলের অরণ্যে
মনে হচ্ছে, আমি একটা অন্ধকার যে তোমাকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে
মনে হচ্ছে, আমি আদিম-সমুদ্র-ঘোড়া, আজ প্রবল সঙ্গমের স্লোগানে মেতে উঠেছি তাই
চারিদিকে কেবল স্বপ্নদোষ আর মুদ্রাস্ফীতি—যেনো মুদ্রাস্ফীতি আর স্বপ্নদোষের সঙ্গমে উৎপন্ন শিশুর নাম মুদ্রাদোষ। সবকিছুকে দুই হাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে রেখে আমি যে লিখেই চলেছি দানবের মতো তোমার শরীরের পাতায়—আমার সেরা কোনো কবিতা।
নিনা, আমাকে দ্যাখো: আমি এই ব্রহ্মাণ্ডের আদি কবি—আমার ক্ষমতা আছে প্যারালাল ইউনিভার্সকে নিজের মুঠোয় এনে রুবিস্কিউবের মতো ইচ্ছেমতো সাজানোর। তখন তোমার নামের—তখন তোমার কামিজ খুলে পিঠে লিখবো নতুন কবিতা—সেই কবিতা, যে কবিতাটা লেখার জন্য আমি জন্মেছি
যে কবিতাটা লেখার জন্য আমার এতগুলো কবিতা বৃথাই লিখেছি আমি
**
কেয়ামত— সে তো তোমার হুট করে চলে যাওয়া
ফেয়ারওয়েল এবং ওয়েলফেয়ার— এর মধ্যে তফাৎ করে দেখেছি ফেয়ারওয়েল আসলে আমার চোখের ভেতর তোমার প্রস্থানের সিনারিও।
তোমার প্রস্থান একেকটা বন্ধুর মৃত্যুর মতো, করুণ আর কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে আসে।
তুমি কেনো আমাকে বারবার জন্ম দিতে, নিজেও জন্মাও বারবার?—এই প্রশ্নের কোনো রেডিমেড উত্তর তোমার কাছে ছিলো না, তোমার ছিলো ঘুম, সবারই থাকে। তুমি তাহলে ঘুমোতে যাও, আমি তোমার অন্ধকারের পার্সোনিফিকেশন।
আমাকে লুফাহ'র সাথে মেখে নেবে না জানি, কারণ
আমি তোমার স্নানের এমনই জল যার অধিকাংশই যাবে ঝরে, আর বাকিটা তুমি নিজেই দিবে মুছে
আমার কবরের এপিটাফে আমি তোমার নাম লিখে যাবো, যেনো আমার মৃত্যুর পরও তোমার ডাকনাম উচ্চারিত হয়। আমার চেয়েও কাতর স্বরে ওরা তোমাকে ডাকবে, তোমার হৃদয় ফের কেঁপে উঠবে...
নিনা,  কে তুমি?—
আমি তোমার নাম ভুলে গেছি।
[লা নিনা ] 

 

এসএফ

×