ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনা সামরিক প্রযুক্তির প্রথম বড় পরীক্ষা: বিশ্বব্যাপী প্রভাব ও ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:৪৫, ১০ মে ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনা সামরিক প্রযুক্তির প্রথম বড় পরীক্ষা: বিশ্বব্যাপী প্রভাব ও ভবিষ্যৎ

ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সামরিক উত্তেজনা চীনের জন্য হয়ে উঠেছে একটি বাস্তব যুদ্ধের পরীক্ষাগার—বিশ্বে চীনা সামরিক প্রযুক্তির সক্ষমতা কতটা কার্যকর তা প্রথমবারের মতো পরখ করার সুযোগ পেয়েছে বেইজিং। এরই মধ্যে চীনা প্রতিরক্ষা কোম্পানির শেয়ারমূল্য হু-হু করে বাড়তে শুরু করেছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা চীনের তৈরি জে-১০সি (J-10C) যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে—যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল (Rafale)। যদিও ভারত এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং কোনো বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেনি। তবে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তত একটি রাফায়েল সম্ভবত ধ্বংস হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে কিছু জানে না। তবুও পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে চীন সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে কীভাবে তার তৈরি অস্ত্র ও প্রযুক্তি বাস্তব সংঘর্ষে কার্যকর হচ্ছে।

চীন গত চার দশকে কোনো বড় যুদ্ধে জড়ায়নি। কিন্তু শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে দেশটি তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে—বিশেষ করে হাইটেক অস্ত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তিতে। সেই আধুনিকীকরণের বড় অংশ গেছে পাকিস্তানের কাছেও, যাকে চীন আখ্যা দেয় “লোহার ভাই” হিসেবে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (SIPRI) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের আমদানিকৃত অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান, মিসাইল, রাডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত কি নতুন রূপ নিচ্ছে?

কাশ্মীরের একটি পর্যটনস্থলে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত “সন্ত্রাসী অবকাঠামো”-কে লক্ষ্য করে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতীয় বিমানকে গুলি করে নামানোর দাবি তোলে।

পাকিস্তান বলছে, ১২৫টি বিমানের সংঘর্ষে তাদের জে-১০সি যুদ্ধবিমান ৩টি রাফায়েল, ১টি মিগ-২৯ এবং ১টি সু-৩০ গুলি করে নামায়। এটি ২টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকাশযুদ্ধ বলে অভিহিত হচ্ছে। যদিও প্রমাণ এখনো প্রকাশ করেনি ইসলামাবাদ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত আসলে চীন ও পশ্চিমা সামরিক প্রযুক্তির একপ্রকার সরাসরি প্রতিযোগিতা। একদিকে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে চীনা অস্ত্র, অন্যদিকে ভারত ব্যবহার করছে ফ্রান্স, রাশিয়া ও আমেরিকার প্রযুক্তি।

চীনা প্রযুক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়বে?

চীনের তৈরি জে-১০সি বিমান আধুনিক অস্ত্র ও এভিয়নিক্সসহ ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত, যা রাফায়েলের সমতুল্য। পাকিস্তান ২০২২ সালে প্রথম এই বিমান হাতে পায়। পাকিস্তান তাদের জেএফ-১৭ ব্লক III বিমানেও চীনের উন্নত PL-15 মিসাইল ব্যবহার করছে, যা ২০০-৩০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়।

এই ঘটনাগুলো চীনের জন্য একটি “শক্তিশালী বিজ্ঞাপন” হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। অনেক দেশ যারা পশ্চিমা প্রযুক্তি কিনতে পারে না বা নিষেধাজ্ঞার মুখে, তারা এখন চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো এর মধ্যে রয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি ভারতের বিমান হারানোর খবর সত্যি হয়, তাও কেবল প্রযুক্তির কারণে নয়, বরং ভারতীয় বিমান বাহিনীর কৌশলগত ভুল ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণেও হতে পারে।

অন্যদিকে ভারতীয় মিসাইল আঘাতে পাকিস্তানের একাধিক লক্ষ্যবস্তু আক্রান্ত হওয়াও প্রশ্ন তোলে পাকিস্তানের চীনা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে।


ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পাকিস্তান পুরোপুরি ঝুঁকেছে চীনের দিকে। চীন-পাকিস্তান যৌথ সামরিক মহড়া ও অস্ত্র উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক এখন একটি কৌশলগত জোটে রূপ নিয়েছে।

এই সংঘাত যদি দীর্ঘায়িত হয় বা আরও প্রকট আকার ধারণ করে, তাহলে তা চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি নতুন মঞ্চে পরিণত হতে পারে—যেখানে অস্ত্রের কার্যকারিতা নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের বাজার ভাগাভাগির নিয়তি।

এসএফ

তথ্যসূত্র: সিএনএন

×