
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলের অবরোধে ধুঁকতে থাকা গাজায় মানবিক সংকট চরমে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে একে একে মারা যাচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ আর অসহায় মানুষ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা—গাজায় সহায়তা পৌঁছানোর জন্য তারা একটি ‘নতুন ত্রাণ ফাউন্ডেশন’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই ফাউন্ডেশন গঠনের উদ্দেশ্য হলো গাজায় সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করা—যাতে করে সেই সাহায্য হামাসের হাতে না পড়ে। ইসরায়েল এই ফাউন্ডেশনকে নিরাপত্তা দেবে, তবে সরাসরি সহায়তা বিতরণে যুক্ত থাকবে না। এই পরিকল্পনার আওতায় গাজায় চারটি নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্র তৈরি হবে, যেখানে প্রতি কেন্দ্রে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ সহায়তা পাবে।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পরিকল্পনাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক কাঠামোকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই ত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এটি সহানুভূতির নামে গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সাবেক মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেন, ‘এটি আসলে এইড-ওয়াশিং। অর্থাৎ মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার মুখোশ পরে একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতা ঢেকে রাখা। বাস্তবে মানুষকে ক্ষুধার মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে, জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে—যা গণহত্যারই একটি কৌশল।’
ইসরায়েল গত দুই মাস ধরে গাজায় সবধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। খাদ্য, ওষুধ, পানি কিছুই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েল বলছে, তারা কেবল তখনই সহায়তা ঢুকতে দেবে, যখন তাদের শর্তে নতুন একটি ত্রাণ ব্যবস্থাপনা চালু হবে। এই অবস্থায় ইতোমধ্যে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে জাতিসংঘের সংস্থা UNRWA। তাদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, কর্মী, গুদামঘর, যানবাহন—সব কিছুই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চাইছে UNRWA-কে বাদ দিয়ে একটি নতুন প্রক্রিয়া চালু করতে, যেখানে তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অনেকেই বলছেন, এটি UNRWA-কে ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ।
তবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ‘এই উদ্যোগ মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র বানানোর চেষ্টা। সহায়তা কেবল মানবিক চাহিদার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, রাজনৈতিক এজেন্ডা দিয়ে নয়।’
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ গাজাবাসী। তারা এখনো প্রতিদিন জীবন ও মৃত্যুর লড়াইয়ে রয়েছে। নতুন এই ত্রাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে গাজাবাসীদেরকে নির্দিষ্ট কিছু বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হবে, যেখানে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা বরাবরের মতোই থাকবে। তাই সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ এই পরিকল্পনা মানবিক সহায়তা নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে তোলার আরেকটি কৌশল।
গাজার মানুষ আজ সহায়তার জন্য মরিয়া। অথচ সেই সহায়তাকেও আজ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, দখল ও চাপ প্রয়োগের অস্ত্র বানানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সহায়তা বিতরণকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি প্রকৃত মানবিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো।
সূত্রঃ আল-জাজিরা
আরশি