বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দুর্বৃত্তরা শুধু মাটি, পানি বা নদী দূষণ করছে না, তারা আমাদের মগজেও পলিউশন ঘটাচ্ছে। এসব দুর্বৃত্তদের কেউ নিজের শক্তিতে অপরাধ করে, আবার কেউ রাজনৈতিক গডফাদারদের আশ্রয়ে থেকে বড় ধরনের অপরাধ সংঘটন করে পার পেয়ে যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পলিউশন শুধু পরিবেশে নয়, এটা আমাদের চিন্তাভাবনায়ও ঢুকে পড়েছে। দুর্বৃত্তরা যদি রাজনৈতিক আশ্রয় না পেত, তাহলে বড় ধরনের অপরাধ করেও কেউ রক্ষা পেত না। রাজনীতিবিদদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে এরা শুধু অপরাধই করে না, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংস করেও শেল্টার পায়।”
তিনি আরও বলেন, দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এবং সেগুলোর বর্জ্য শোধনের (ETP) কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে বিষাক্ত বর্জ্যে নদী ও সুপেয় পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে, জলজ প্রাণী পালিয়ে যাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিজমিও হয়ে পড়ছে বিষাক্ত।
ডা. শফিক বলেন, “কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজররা যদি মাঠ পর্যায়ে সঠিক ভূমিকা পালন করতেন, তাহলে কৃষকরাও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণে আমাদের উর্বর জমির জীবনও হুমকির মুখে।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “দেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা বিষয়ে পড়ানো হয়, অথচ পরিকল্পনা কমিশনে ওই বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো জায়গা বরাদ্দ নেই। তাহলে এই বিষয়ে পড়ানোর প্রয়োজনীয়তাই বা কী? রাষ্ট্র যদি এই শিক্ষার মূল্যায়ন না করে, তাহলে জনগণের অর্থে শিক্ষার্থীদের ওপর বিনিয়োগও অযৌক্তিক।”
দেশ পরিচালনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দেশ চলে দুটি জিনিসে—একটা হলো জনগণের ট্যাক্স, আরেকটা হলো বিদেশি ঋণ। একজন দরিদ্র ভিক্ষুকও যখন দোকানে গিয়ে কিছু কেনে, তখন সে ট্যাক্স দেয়। কিন্তু সে জানেই না, সে একজন ট্যাক্সদাতা। যদি সবাই জানত তাদের টাকায় রাষ্ট্র চলে, তাহলে তারা অধিকার আদায়ে আরও সচেতন হতো।”
তিনি বলেন, “পলিউশন থেকে মুক্ত একটি সমাজ গড়তে হলে আগে আমাদের মগজের দূষণ দূর করতে হবে। আর সেটা না হলে একটি পরিচ্ছন্ন, নৈতিক ও উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব নয়।”
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=cW6opVfmd_w