ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠার উচ্চারণ ‘ছিন্নপত্র’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৩, ১১ মে ২০২৫

সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠার উচ্চারণ ‘ছিন্নপত্র’

.

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  জন্মজয়ন্তী  উপলক্ষে শনিবার  সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে  অনুষ্ঠিত হলো ‘পদ্মাপারে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।  টেগোর   সোসাইটি ঢাকা আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে ছিল ‘ছিন্নপত্র’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।  দ্বিতীয় পর্বে ছিল ছিন্নপত্র থেকে চিঠি পাঠ ও গান পরিবেশনা। এতে অংশ নেন ইফফাত আরা দেওয়ান, আজিজুর রহমান তুহিন, তানজীনা তমা, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও মাহিনুর মুমু।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয়  প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী  ড. চঞ্চল খান পরিচালিত ‘ছিন্নপত্র : পদ্মাপারে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র। ‘ছিন্নপত্র’ রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিগুলোর একটি সংকলন যা বাংলা সাহিত্যে গদ্য চিঠিকে কাব্যিক ও  দার্শনিক উচ্চতায় উন্নীত করে। এই চিঠিগুলো কেবল পাঠযোগ্য সাহিত্য নয় বরং পাঠকের আত্মোপলব্ধির পথেও সহায়ক এক প্রামাণ্য দলিল।  সেই প্রামাণ্য দলিলসমূহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে।
‘ছিন্নপত্র’ মূলত ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে লেখা ২৫৪টি চিঠির সংকলন। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার প্রিয় ভাইঝি ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে, যিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা নারী এবং কবিগুরুর কাছের একজন। ইন্দিরা দেবী তখন সাঁওতাল পরগণার গিরিডিতে অবস্থান করতেন এবং রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শিলাইহে পদ্মাপারে তার জমিদারির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত। এই চিঠিগুলো প্রথাগত খবরাখবরের চিঠি নয়। এগুলো আত্মপ্রকাশ, দর্শন, কবিতার মতো শব্দপ্রবাহ, যেখানে পাঠক রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ের উন্মোচন দেখতে পান।  ছিন্নপত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  সব মিলিয়ে ২৫৪টিরও  বেশি চিঠি লিখেছেন, যার অধিকাংশই  লেখা হয়েছে ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে। যদিও প্রথম প্রকাশিত সংকলনে প্রায় ৮৭টি চিঠি ছিল, পরবর্তীতে বহু অপ্রকাশিত চিঠি রবীন্দ্র রচনাবলি, ছিন্নপত্রাবলি, ও অন্যান্য চিঠিপত্র সংকলনের মাধ্যমে আলোয় আসে।
রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রের বেশিরভাগ চিঠি লিখেছেন শিলাইহে বসেÑএক নির্জন, শান্ত, নদীবেষ্টিত গ্রামীণ জনপদে। এই পরিবেশ তার আত্মবিশ্লেষণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ছিন্নপত্রে তিনি ঈশ্বরচিন্তাকে  কোনো প্রথাগত ধর্মীয় কাঠামোতে বন্ধ করেননি বরং তিনি অনুভব করেন, আত্মা ও বিশ্বচেতনা একে অপরের প্রতিরূপ।  এটি চিঠিকে নিতান্ত ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে সাহিত্যিক শিল্পে পরিণত করেছে।  ‘ছিন্নপত্র’ বাংলা সাহিত্যে কেবল একটি গ্রন্থ নয়, এটি একজন মানুষের আত্মা, নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের সঙ্গে চলমান সংলাপের দলিল।   ‘ছিন্নপত্র’ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনোজগতের নিঃশব্দ উচ্চারণ।  ‘ছিন্নপত্র’ তাই সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠা আত্মার উচ্চারণ।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শিল্পকলায় সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ আজ রবিবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা। আর মহামতি গৌতম বুদ্ধর ত্রিস্মৃতিময় দিবসটি উপলক্ষে শনিবার রঙিন রূপ পেল সেগুন বাগিচার একাডেমির নন্দন মঞ্চ। সন্ধ্যা  পেরিয়ে অবধি অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেই সুবাদে কণ্ঠশিল্পীর গাওয়া গানের সুরে সিক্ত হয়েছে শ্রোতার অন্তর। নৃত্যশিল্পীর পরিবেশিত নাচের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হয়েছে দর্শক নয়ন। সঙ্গে ছিল শ্রোাতার হৃদয়ে আলোড়ন তোলা বৈচিত্র্যময় ব্যন্ড সংগীতের পরিবেশনা।  আর রাজধানী ঢাকার সমান্তরালে  এদিন থেকে ছয় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সংস্কৃতি উৎসব।
সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই পরমেশ বড়ুয়ার পরিচালনায় মানবতাবাদী সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন ধর্মরাজিক ললিতকলা একাডেমির বাসাবো ও সবুজবাগের শিল্পীবৃন্দ। অন্তর  দেওয়ানের পরিচালনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বৌদ্ধ শিল্পীবৃন্দ। নাচের পালা শেষে পুনরায় গান নিয়ে  সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সায়ন। সবশেষে সংগীত পরিবেশন করেন  ডিফারেন্ট টাচ ব্যান্ড।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।

×