ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রমিকদের কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়! বড় সিদ্ধান্তে আইএলও

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ১১ মে ২০২৫

শ্রমিকদের কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়! বড় সিদ্ধান্তে আইএলও

ছবি: সংগৃহীত

দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশের ১৩টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাঠ্যক্রমে আন্তর্জাতিক শ্রম মান যুক্ত করতে যাচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, “আজকের দিনটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কারণ আইএলও এবং ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় শ্রম আইন পাঠ্যক্রমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম মান একীভূত করতে এবং প্রভাষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে একত্র হয়েছে।”

চুক্তিতে স্বাক্ষর করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (AIUB), অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।

সচিব আরও বলেন, “শিল্প এলাকায় ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এ জন্য আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন, সরকার এবং শিল্পকে একাডেমিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।”

আইএলও বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, “এই উদ্যোগটি শুধু শ্রম আইন শিক্ষাকে নয়, বরং সামাজিকভাবে সচেতন শ্রম আইনজীবীদের নতুন প্রজন্ম তৈরিতে সহায়ক হবে। ইতোমধ্যেই আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা শীঘ্রই দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তির প্রত্যাশা করছি।”

এই প্রকল্প টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভ অন ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ (TEI on DWIB)-এর অংশ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন থিজ উডস্ট্রা বলেন, “আন্তর্জাতিক শ্রম মান (ILS) মানবাধিকার ও মর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও সামাজিকভাবে সচেতন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন।”

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আজ আমরা পরিবর্তনের বীজ বপন করছি। শিক্ষকরা এমন এক সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলবেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা শ্রমিক ও সমাজের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে।”

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “শ্রমকে পণ্য হিসেবে নয়, মানবাধিকার হিসেবে দেখতে হবে — এটি আইএলওর মৌলিক দর্শন। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হওয়া উচিত। রিকশাচালক ও দিনমজুরদের মতো অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার।”

অনুষ্ঠানে আইএলওর ছায়ানিচ থাম্পারিপাত্র শ্রম আইন শেখানোর বিষয়ে তথ্যবহুল উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এতে জানানো হয়, আইএলএস একীভূত করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএলওর এলেনা গেরাসিমোভা, AIUB-এর উপদেষ্টা ড. তাসলিমা মনসুর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ একরামুল হক।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুষদ সদস্যদের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড বিষয়ে পরিচিতিমূলক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

শহীদ

×