
ছবি: সংগৃহীত
বন্ধুত্ব কখনও কখনও গভীর সম্পর্কের আশ্রয় হলেও, মাঝে মাঝে সেই ঘনিষ্ঠতাই দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। আপনি ও আপনার বন্ধুর মধ্যে যদি বারবার ঝগড়া হয়, এবং সেই কারণে সম্পর্ক বিষিয়ে উঠতে থাকে—তাহলে কি একটু দূরত্ব তৈরি করা উচিত? নাকি সেটাই সম্পর্কের অবনতি ডেকে আনবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনোচিকিৎসক ক্যাথি সিনশাইমার জানান, “সীমানা টানা মানেই সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বরং সেটা হতে পারে নিজের আবেগ রক্ষা করার এক উপায়।” তার মতে, সীমানা মানে হচ্ছে, অন্যের আচরণ বদলানো নয়—বরং কী পরিস্থিতিতে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিজের মধ্যে পরিষ্কার রাখা।
সীমানা টানার আগে কিছু ভাবনা
১. নিজের ভূমিকা বোঝা:
প্রতিটি সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক। যদি বন্ধুর সঙ্গে সমস্যা হয়ে থাকে, আপনি নিজেও কোনওভাবে সেই জটিলতায় অবদান রাখতে পারেন। নিজের ভেতরের বাধাগুলি বোঝা জরুরি।
২. বিশ্বাসভাজন কাউকে বলুন:
পরিবারের কেউ, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, থেরাপিস্ট বা আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা—যে কাউকে আপনার পরিকল্পনার কথা বলুন। আপনি যে পন্থা নিচ্ছেন, সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে মত নিন।
৩. আত্ম-সচেতন থাকুন:
কঠিন কথাবার্তার আগে শান্ত ও স্থিত থাকাটা জরুরি। ঘুম, পুষ্টি, হালকা হাঁটাহাঁটি বা প্রিয় গান শোনা—এই সবকিছু আপনাকে প্রস্তুত করতে পারে।
৪. সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো মনে করুন:
- ঝগড়ার মাঝে ভুলে যাওয়া সহজ, কেন এই বন্ধুত্ব একসময় আপনাকে আনন্দ দিত। সেই ভালো মুহূর্তগুলো স্মরণ করলেও কথোপকথন সহজ হতে পারে।
- কথা বলার সময় কিছু কৌশল
- নির্দিষ্ট সময়, স্থান এবং সময়সীমা নির্ধারণ করে আলোচনায় বসুন।
- ধীরে ও নম্র স্বরে কথা বলুন।
- একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে একটু বিরতি নিন।
- আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়লে নিজে থেকে 'ব্রেক' চেয়ে নিন।
- আলোচনার পর একসঙ্গে কোনো মজার কিছু করার প্রস্তাব দিন, যাতে সম্পর্কের ইতিবাচক দিক আবার ফিরে আসে।
বন্ধু যদি আপনার সীমারেখা গ্রহণ করে—তাহলে সেটা সম্পর্কের একটা নতুন দিক খুলে দিতে পারে। কিন্তু যদি তারা গ্রহণ না করে, তবুও আপনি নিজেকে সম্মান জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার সাহস দেখালেন। প্রয়োজনে সাময়িক বিরতি নিতে পারেন, কিন্তু সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত যেন শেষ উপায় হয়।
সীমানা টানা মানে দেয়াল গড়া নয়, বরং দরজা খোলা রাখা—যেটা দিয়ে আলো আসতে পারে, আবার দরকারে নিজের ভেতরেও ফিরে যাওয়া যায়।
এসএফ