
সম্পর্ক মানেই শুধু প্রেম, উপহার বা মাঝেমধ্যে অভিমান নয়। এর বাইরেও থাকে অনেক অদৃশ্য স্তর, যেগুলোর গভীরে গেলে বোঝা যায়,এই সম্পর্কটা আদৌ দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে কিনা। অনেক সময় আমরা এই সংকেতগুলো বুঝতেই পারি না, আবার কেউ কেউ বোঝার পরেও চুপচাপ সহ্য করে যান, ভেঙে পড়েন ভিতরে ভিতরে।
একজন অভিজ্ঞ সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন এই আটটি সূক্ষ্ম অথচ গভীর সংকেত যদি সম্পর্কের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটি হয়তো ভেতরে ভেতরে নড়ে গেছে।
১. আবেগের রোলার কোস্টার: ভালো-মন্দের দোলাচলে ক্লান্তি
প্রেমের শুরুতে উচ্ছ্বাস থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সম্পর্কটা একরকম ইমোশনাল রোলার কোস্টারে পরিণত হয়,আজ দারুণ দিন, কাল বিষণ্ণ রাত,তবে সেটা সমস্যা তৈরি করে। প্রতিদিন যদি আন্দাজ করাই কঠিন হয়ে যায়, সঙ্গীর মেজাজ কোনদিকে যাবে, আপনি কেমন ব্যবহার পাবেন তাহলে সেই অনিশ্চয়তা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে।
২. পারস্পরিক সম্মানের অভাব: শুধু ভালোবাসা যথেষ্ট নয়
ভালোবাসা থাকলেই সব কিছু হয় না। সম্পর্কের ভিতটা গড়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর। আপনি যদি বারবার অনুভব করেন, আপনার মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না, সিদ্ধান্তে আপনার মত শোনা হচ্ছে না,তবে সেখানে অদৃশ্য এক অপমান জমা হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সেটাই দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. ৫:১ অনুপাতের অদৃশ্য সূত্র
ড. জন গটম্যানের গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কগুলোয় প্রতি ১টি নেতিবাচক মুহূর্তের বিপরীতে থাকে অন্তত ৫টি ইতিবাচক মুহূর্ত। যদি সম্পর্কের প্রতিদিনটাই অভিযোগ, অভিমান, না-পাওয়ার হাহাকার দিয়ে ভরা থাকে,তবে ভালো লাগার মুহূর্তগুলো হারিয়ে যায়। এই অনুপাতই বলে দেয় সম্পর্কটা টিকবে কি না।
৪. কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা না হওয়া
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আর্থিক চাপ, পরিবার বা অতীতের ভুল এসব নিয়ে কথা বলা সহজ নয়, কিন্তু জরুরি। যদি সম্পর্কের এমন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়েই আলোচনা না হয়, শুধুই হালকা কথাবার্তায় সম্পর্কটা সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বোঝা যায় গভীর সংযোগ তৈরি হয়নি। এড়িয়ে যাওয়া মানেই সমস্যার জমাট বাঁধা।
৫. নিজস্বতা হারিয়ে যাওয়া: আপনি আর আপনি নেই
ভালোবাসা মানে নিজেকে ভুলে যাওয়া নয়। বরং একজনের ভালোবাসায় আপনি যেন আরও নিজের মতো করে বাঁচতে পারেন, সেই হওয়া উচিত। যদি সম্পর্কের চাপে আপনি নিজের আগ্রহ, শখ, এমনকি বন্ধুবান্ধব থেকেও দূরে সরে যান, নিজেকে হারিয়ে ফেলেন,তাহলে সেটা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের ইঙ্গিত নয়।
৬. দ্বন্দ্বহীন সম্পর্ক: নীরবতা কি শান্তি?
দ্বন্দ্ব না থাকা মানেই সব কিছু ঠিকঠাক চলছে,এটা ভুল ধারণা। মাঝে মাঝে ঝগড়া, মতবিরোধ, ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু যদি সম্পর্ক এতটাই নীরব হয়ে যায় যে কেউ কিছু নিয়েই কথা বলেন না,তবে সেটা মানসিক দূরত্বের ইঙ্গিত। এমন সম্পর্ক নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে।
৭. ব্যক্তিগত উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা
একটি সত্যিকারের সম্পর্ক মানুষকে আরও ভালো করে তোলে। আপনি যদি দেখেন, সম্পর্কের কারণে নিজের স্বপ্ন, ক্যারিয়ার, আত্মউন্নয়নের পথ থেমে যাচ্ছে,তবে সেটা হুমকিস্বরূপ। সঙ্গী যদি বারবার আপনার স্বপ্নকে ছোট করে দেখেন বা উৎসাহ না দেন, তাহলে সেটি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৮. বিশ্বাসহীনতা: নিঃশব্দ ফাটল
বিশ্বাস না থাকলে কোনো সম্পর্ক টেকে না,এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বাস্তবে এর অনুপস্থিতি অনেক সময় সূক্ষ্ম। হয়তো আপনি সঙ্গীর মেসেজ লুকিয়ে দেখেন, হয়তো সঙ্গী আপনাকে নিয়েই সন্দেহে থাকেন,এই অবিশ্বাস চুপচাপ গড়ে তোলে এক দেওয়াল, যা ধীরে ধীরে সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয়। বিশ্বাস একবার ভাঙলে তা ফের তৈরি করতে দীর্ঘ সময় ও আন্তরিকতা লাগে।
এই সংকেতগুলো মানেই যে সম্পর্কটা শেষ, তা নয়। বরং এগুলো একটি সুযোগ, নিজেকে ও সঙ্গীকে বুঝে নেওয়ার, সম্পর্কটাকে নতুনভাবে ভাবার।
প্রতিটি সম্পর্কই টিকে থাকে এক নিরবধি চেষ্টায় ভালোবাসা, সম্মান, বিশ্বাস আর খোলামেলা যোগাযোগে। যদি আপনি এই সংকেতগুলো খুঁজে পান, তাহলে সময় থাকতে নিজেকে প্রশ্ন করুন এই সম্পর্ক আমাকে বড় করছে, না ছোট করে দিচ্ছে?
সূত্র:https://tinyurl.com/57t3hwyr
আফরোজা