
ছবি: প্রতীকী
আমরা অনেক সময়েই অপরকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের উপর এমন সব দায়িত্ব নেই, যা আমাদের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এমনকি অপরিচিত মানুষকেও "না" বলতে আমাদের খুব অস্বস্তি হয়। কারণ আমরা ভাবি, যদি সে মন খারাপ করে? যদি আমি খারাপ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হই? কিন্তু এই 'হ্যাঁ বলার অভ্যাস' আসলে আমাদের নিজের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, সেটা আমরা বুঝি তখন, যখন কাজের চাপ আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়টুকুও কেড়ে নেয়।
"না" বলা মানে অমানবিক হওয়া নয়। এটা নিজের সময়, শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। যখন আমরা সবকিছুতে 'হ্যাঁ' বলতে থাকি, তখন একসময় নিজের কাজগুলো জমে যায়। অফিসের কাজ, বাসার কাজ, আত্মীয়-বন্ধুর আবদার – সব মিলে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যার ফলাফল হয় ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, বিরক্তি আর ক্লান্তি। অথচ শুধু সময়মতো "না" বলতে পারলে এই অতিরিক্ত চাপ অনেকটাই কমে যেত।
আমাদের সমাজে অনেক সময় 'না' বলাকে অভদ্রতা বা অহংকার ভাবা হয়। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়, 'সবসময় সাহায্য করো, সবাইকে খুশি রাখো, নিজেকে পরে ভাবো'। কিন্তু এই চিন্তাধারা আমাদের বড় হয়ে অনেক সমস্যায় ফেলতে পারে। কারণ সবাইকে খুশি করতে গিয়ে নিজের জীবনটা অগোছালো হয়ে যায়। আমরা বুঝতেই পারি না, কার সাহায্যটা সত্যিই প্রয়োজনীয় আর কারটা এড়ানো যায়।
'না' বলার মানে এই না যে কাউকে অপমান করা। এটা শিখতে হবে কীভাবে নম্রভাবে না বলতে হয়। যেমন – কেউ যদি কোনো কাজ করতে বলে, যা আপনার সময় বা শক্তির বাইরে, তখন আপনি বলতেই পারেন, “আমি দুঃখিত, এখন আমার সময়টা খুব চাপের মধ্যে, এটা করতে পারব না।” আবার কারো ব্যক্তিগত আবদার যদি আপনার মূল্যবান সময় খেয়ে ফেলে, তখন আপনি বলে দিতে পারেন, “এই মুহূর্তে আমার নিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, পরে সময় পেলে জানাবো।” এতে আপনি নিজের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে অপরের সাথেও সম্মানজনক আচরণ করতে পারেন।
অনেক সময় নিজের ঘনিষ্ঠ মানুষকেও "না" বলতে হয়, বিশেষ করে যখন তাদের আবদারগুলো নিয়মিত হয়ে যায়। যেমন কেউ প্রতিদিন আপনার কাছ থেকে কিছু চায় বা সাহায্য নেয়, অথচ আপনি সেই সময়টায় নিজের পরিবারের বা নিজের জন্য সময় রাখতে পারতেন। তখন অবশ্যই নিজেকে অগ্রাধিকার দিন। কারণ আপনি যদি নিজের প্রয়োজনগুলো অবহেলা করেন, তাহলে একসময় আপনি নিজেই ক্লান্ত, অসন্তুষ্ট আর অসহায় হয়ে পড়বেন।
"না" বলা শিখলে আপনি আপনার সময়টাকে ঠিকভাবে ভাগ করতে পারবেন। যেটা প্রয়োজনীয় নয়, সেটা বাদ দিতে পারবেন। এতে আপনি নিজের কাজ গুছিয়ে করতে পারবেন, মানসিক চাপ কমবে, এবং আপনার কর্মক্ষমতা বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি নিজেকে সময় দিতে পারবেন – যা আজকের ব্যস্ত জীবনে খুবই জরুরি।
'না' বলার সাহসটা প্রথমে কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাস করলে এটা সহজ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, সবকিছুর দায়িত্ব আপনার একার নয়। আপনি যদি নিজের উপর অযথা চাপ নেন, তাহলে সেটা কেউ এসে কমিয়ে দেবে না। বরং সবাই ভাববে, আপনি তো সব কিছুতেই 'হ্যাঁ' বলেন, তাহলে আর চিন্তা কী!
তাই আজ থেকেই একটু একটু করে শিখুন – কখন "না" বলা দরকার, কীভাবে বলা যায়, আর কোথায় নিজের সীমানা টানতে হবে। এটা শুধু ওয়ার্কলোড কমানোর জন্যই না, বরং নিজের জীবনে ভারসাম্য রাখার জন্যও জরুরি। "না" বলা কোনো অপরাধ নয়, বরং এটা একটা আত্মরক্ষার কৌশল। আপনি যখন নিজের উপর দায়িত্ব কমিয়ে আনবেন, তখনই দেখবেন – আপনি অনেক হালকা, অনেক সুখী এবং অনেক বেশি প্রোডাকটিভ হয়ে উঠেছেন।
এম.কে.