ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

আরেকটি ভাষা আন্দোলন হবে ভারতে !

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

আরেকটি ভাষা আন্দোলন হবে ভারতে !

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের হিন্দি ভাষা প্রচলনের উদ্যোগ দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।

 

 

মোদির দল বিজেপি মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকলেও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ফলে রাজ্য সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার নীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়। রাজ্যের স্থানীয় ভাষা মারাঠিকে অপমান করা হয়েছে বলে অনেক বাসিন্দা ও রাজনীতিক এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন।

এই ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে এবং ভাষার প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে গিয়ে একত্রিত হন মারাঠি জাতীয়তাবাদী দুই নেতা—রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরে। প্রায় ২০ বছর পর এই দুই চাচাতো ভাই একসাথে ভাষার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন।

 

 

 

তামিলনাড়ু সরকারের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হিন্দি ভাষার কোনো প্রয়োজন নেই তাঁদের রাজ্যে। তিনি বলেন, “তামিল এবং ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা উচ্চ সাক্ষরতার হার অর্জন করেছি।”

বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীদের মতে, ভারতে একটি নির্দিষ্ট ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ভাষাগত বৈচিত্র্য ও জাতীয় সংহতির জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তাঁদের আশঙ্কা, এতে দক্ষিণ ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে পারে।

২০২০ সালে মোদি সরকার জাতীয় শিক্ষানীতিতে বড় পরিবর্তন এনে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় শিক্ষার উপর জোর দেয়। সেই নীতিতে তিনটি ভাষা শেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়, যার মধ্যে অন্তত দুটি ভারতীয় ভাষা থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও রাজ্যগুলোকে নিজস্ব ভাষা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তবু অনেক রাজ্য এই নীতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছে।

মোদি সরকারের ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং হিন্দু সংস্কৃতিকে তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা চলছে, তার অংশ হিসেবেই ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘ভারত’ নাম ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই ‘ভারত’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে, এবং হিন্দি ভাষারও মূল সেই দিক থেকেই উদ্ভূত—এমন ধারণা প্রচার করায় দেশটির ভাষাভিত্তিক রাজ্যগুলোতে উদ্বেগ ও ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে।

 

 

এই বিতর্কে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ভারতের ভাষা-রাজনীতি এখনও অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ইস্যু। স্থানীয় ভাষার মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষায় অঞ্চলভিত্তিক প্রতিরোধ আরো তীব্র হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ছামিয়া

আরো পড়ুন  

×