ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

তিন বছরের যুদ্ধের অবসান! ইউক্রেনকে সরাসরি শান্তি আলোচনা প্রস্তাব পুতিনের

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৫, ১১ মে ২০২৫

তিন বছরের যুদ্ধের অবসান!  ইউক্রেনকে সরাসরি শান্তি আলোচনা প্রস্তাব পুতিনের

ছবিঃ সংগৃহীত

ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি জানিয়েছেন, এই আলোচনা আগামী ১৫ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হতে পারে। পুতিনের দাবি, এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হবে যুদ্ধের মূল কারণ দূর করে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী প্রবেশ করার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা অনেকের কাছে কিউবান মিসাইল সংকটের পর সবচেয়ে গুরুতর।

পুতিন বলেন, "আমরা কিয়েভকে কোনোরকম পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছি। আলোচনা শুরু হোক আগামী বৃহস্পতিবার, ইস্তাম্বুলে।"

তিনি আরও জানান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি এই শান্তি আলোচনাকে বাস্তব রূপ দিতে চান।

তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

পুতিন বলেন, রাশিয়া এর আগেও একাধিকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে—যেমন জ্বালানী স্থাপনায় হামলা বন্ধ, ইস্টার যুদ্ধবিরতি, এবং সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব। তবে তার অভিযোগ, ইউক্রেন এসব যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

তিনি দাবি করেন, মে মাসের যুদ্ধবিরতির সময় ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর ৫২৪টি ড্রোন, ৪৫টি সমুদ্র-ড্রোন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহকৃত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়, এবং রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচটি হামলা প্রতিহত করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে বরং রাশিয়াই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ এখন পুতিনের কাছে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, অন্যথায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

পুতিন এই সবকে ‘আল্টিমেটাম’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।

তিনি জানান, রাশিয়া এখনো ২০২২ সালে প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তির ভিত্তিতে আলোচনায় আগ্রহী। সেই খসড়া অনুযায়ী, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিতে হবে।

পুতিন দাবি করেন, “২০২২ সালে আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটায় ইউক্রেন, রাশিয়া নয়। এখনো আমরা কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় প্রস্তুত।”

তিনি চীন, ব্রাজিল, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, বারবার বলেছেন, তিনি এই “রক্তপাতের অবসান” চান।

পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইউক্রেন এই যুদ্ধকে রাশিয়ার একটি সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখে আসছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে চলেছে।

পুতিনের দৃষ্টিতে, এই যুদ্ধ রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়াকে অপমানিত করা হয়েছে, বিশেষ করে ন্যাটোর সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিজেদের বলয়ের অংশ বানানোর চেষ্টা করে।

 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×