
ছবিঃ সংগৃহীত
২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল, তেহরানের দক্ষিণে অবস্থিত বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি প্রকাশের পর ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনার নতুন মোড় নিয়েছে। ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই আলোচনা তারা ‘গুরুত্বহীন ও প্রতারণামূলক’ বলে মনে করছেন। তার মতে, এসব আলোচনা ছিল আসলে “একটি কৌশলগত ফাঁদ”, যার লক্ষ্য ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনার দিকে পরিস্থিতিকে ঠেলে দেওয়া।
ওই ইরানি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আলোচনা চলাকালীন যেভাবে দীর্ঘ বিরতি ও অসঙ্গত সময় ব্যবধান রাখা হয়েছে, তা ইরানের ইচ্ছার পরিপন্থী ছিল। এর মাধ্যমে মার্কিন পক্ষ একটি রাজনৈতিক ও মিডিয়াভিত্তিক খেলা খেলেছে বলেও তার দাবি। এর প্রেক্ষিতে ইরান এখন আলোচনা ব্যর্থ হলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রবিবার ওমানে নির্ধারিত আলোচনায় অগ্রগতি না হলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং বিকল্প পথ অনুসন্ধান করা হবে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেন, “প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্প সত্যিই ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী এবং তিনি এর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।” তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করুক, কিন্তু একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও ইরানিদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনের পথও খোলা থাকুক।
রবিবারের আলোচনায় উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিকরা অংশ নিলেও, কারিগরি বিশ্লেষক দল সেখানে থাকছে না, অর্থাৎ পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলতার মতো বিস্তারিত বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শনিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরস্পরবিরোধী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নরকম মন্তব্য করছেন। তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কারিগরি ও রাজনৈতিকভাবে অর্থবহ আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়।” বরং তারা “সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট উত্তর” দিচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উপেক্ষা করছে এবং “নিরবিচারে তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। “ইরানে আর কোনোভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের রেড লাইন,” বলেন উইটকফ। তিনি আরও বলেন, ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু ইরান দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হবে—এটাই তাদের চূড়ান্ত সীমারেখা। “যুক্তরাষ্ট্র এটা ভালোভাবেই জানে,” বলেন ইরানি সূত্র। তেহরান বারবার বলে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং শুধুই জ্বালানি উৎপাদনের জন্য।
বর্তমানে আলোচনার মূল বিষয় কেবল পারমাণবিক ইস্যু হলেও, অতীতে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডও আলোচনায় আনতে চেয়েছিল।
এই টানাপোড়েনের মধ্যে দুই পক্ষের মাঝে অনাস্থা ও হতাশা বাড়ছে। ভবিষ্যতের পথ কোনদিকে যাবে, তা নির্ভর করছে রবিবারের আলোচনার ফলাফলের ওপর।
মারিয়া