
ছবি: সংগৃহীত
লেখক ও ইসলামি চিন্তাবিদ মীযান হারুন তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি আদতে একটি রাজনৈতিক বয়ান—যা মূলত আওয়ামী লীগের বয়ান, বরং দিল্লীর বয়ান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, মুসলিম রাষ্ট্রের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া কখনোই অন্যায় নয়। বরং ইসলামি ভিত্তিতে যে ভূখণ্ড এক সময় উপমহাদেশের উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল, সেই ভূখণ্ডকে আবার নতুন করে পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধাচরণ করাই প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনার মূল্যায়ন যেমন জরুরি, তেমনি ১৯৪৭ ও ১৯২৪ সালকেও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কোনো একটি সাল বা রাজনৈতিক বয়ানকে দেশপ্রেমের একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে দাঁড় করানো হলে দেশপ্রেমের প্রকৃত সংজ্ঞা বিকৃত হয় এবং স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ অনিরাপদ হয়ে পড়ে।
মীযান হারুন উল্লেখ করেন, ইসলামপন্থী আলিম-উলামা এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ৭১-পরবর্তী সময়ের অনেক রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ করার আগে দেখা দরকার, কে দেশের ভিতরে থেকেই দেশের জন্য কাজ করেছেন, আর কে দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে ভবিষ্যৎ গড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা কথিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র দাবি নিয়ে আজো রাজনীতি করে, তাদের অনেকেই দিল্লির আনুগত্যের বিনিময়ে পররাষ্ট্রে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। অথচ যাদের ‘রাজাকার’ বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ বলে দীর্ঘদিন আখ্যায়িত করা হয়েছে, তারা এই দেশেই থেকে যাবতীয় মেধা, শ্রম ও সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন।
ভারতের রাজনৈতিক বয়ানের সঙ্গে তুলনা করে মীযান হারুন বলেন, হিন্দুস্তানে জন্মগ্রহণ ও জীবন কাটানো মুঘল শাসকদের কেবল মুসলিম পরিচয়ের কারণে ‘বহিরাগত’ বলা হয়, অথচ প্রকৃত অর্থে দেশদ্রোহিতায় যুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের হিন্দুস্তানী বলা হয়। একই কৌশল এখানেও প্রয়োগ করে ইসলামী চিন্তাবিদদের দেশবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "৭১ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কিন্তু সেটিই একমাত্র সত্য নয়। আমাদের স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের ইতিহাসকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কাছে বন্ধক দেওয়া যাবে না। এখন সময় এসেছে বাইরের শক্তির তৈরি করা এসব বিভাজনমূলক বয়ানকে ছুঁড়ে ফেলে সত্যিকারের জাতীয় চেতনার ভিত্তি পুনর্গঠনের।"