ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

চিফ অ্যাডভাইজার জিওবি-এর তথ্যমতে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান গঠনের কারণ জানালেন সরকার

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:১১, ১৩ মে ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান গঠনের কারণ জানালেন সরকার

ছবিঃ সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার ঘোষণা করেছে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—রাজস্ব নীতিমালা বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো—কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনের কাজকে আলাদা করা, যাতে দক্ষতা বাড়ে, স্বার্থের সংঘাত কমে এবং দেশের কর-ভিত্তি সম্প্রসারিত হয়।

পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যমান এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪%, যা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম নিম্ন। তুলনামূলকভাবে, বৈশ্বিক গড় ১৬.৬% এবং মালয়েশিয়ার ১১.৬%। দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে এই অনুপাত অন্তত ১০%-এ উন্নীত করা জরুরি।

এনবিআরের পুনর্গঠন এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে কর নীতিনির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে—এটি স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ও অদক্ষতা বাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, এনবিআরের নীতিমালাগুলো রাজস্ব আহরণে বেশি মনোযোগী হলেও ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।

এনবিআরের দীর্ঘদিনের কিছু সমস্যা

স্বার্থের দ্বন্দ্ব
একই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হারিয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক সময় কর ফাঁকিদাতাদের সঙ্গে আপস করে ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করছেন। কর আদায়কারীদের কাজের নিরপেক্ষ মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা নেই, এবং তাদের পদোন্নতি কর্মদক্ষতার সঙ্গে যুক্ত নয়।

অদক্ষ রাজস্ব আহরণ
একক প্রতিষ্ঠানের দ্বৈত দায়িত্বের কারণে নীতি প্রণয়ন এবং সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ বিভক্ত হয়েছে। ফলে কর নেট সংকীর্ণই রয়ে গেছে এবং সম্ভাবনার তুলনায় রাজস্ব আহরণ কম।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা
অকার্যকর আইন প্রয়োগ, বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশের অভাব ও নীতি প্রয়োগে অনিয়ম বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়েছে।

ব্যুরোক্রেটিক ওভারল্যাপ
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান একইসাথে এনবিআরের চেয়ারম্যানও হওয়ায় দ্বৈত ভূমিকা তৈরি হয়েছে, যা কার্যকর নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি করেছে।

অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও হতাশা
পুনর্গঠনের এই উদ্যোগ কর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে—অনেকে মনে করছেন, তারা উপেক্ষিত হতে পারেন।

এই পুনর্গঠন কীভাবে সাহায্য করব

দায়িত্বের সুস্পষ্ট বিভাজন
রাজস্ব নীতিমালা বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, কর হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর আদায়, নিরীক্ষা ও সম্মতি নিশ্চিত করার কাজ করবে। এতে নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীর আলাদা পরিচয় নিশ্চিত হবে, স্বার্থের সংঘাত কমবে।

দক্ষতা ও সুশাসন বৃদ্ধি
প্রত্যেক বিভাগ তার নিজস্ব কাজের ওপর মনোনিবেশ করতে পারবে, ফলে পেশাগত দক্ষতা বাড়বে এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা আসবে।

কর ভিত্তি সম্প্রসারণ ও প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে জোর
এই সংস্কারের ফলে কর নেট বাড়বে, পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমবে এবং দক্ষ জনবল প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে নিযুক্ত হবে।

উন্নয়নকেন্দ্রিক, দূরদর্শী নীতিমালা
একটি আলাদা নীতিনির্ধারণী ইউনিট প্রমাণ-ভিত্তিক ও ভবিষ্যতমুখী নীতিমালা তৈরি করতে পারবে, যা শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্যে নয় বরং টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি
স্বচ্ছ, পূর্বানুমানযোগ্য নীতিমালা ও পেশাদার প্রশাসন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবে, যা বেসরকারি খাতের অভিযোগ কমাবে।

অবশেষে, এই কাঠামোগত সংস্কার কোনো সাধারণ আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয়—বরং এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে একটি ন্যায্য, দক্ষ ও আধুনিক কর ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। শক্তিশালী নীতিনির্ধারণ ও স্বচ্ছ প্রশাসন বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/p/1B6TT7W2iD/

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×