ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রহমতখালী খাল, বর্ষায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা

ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ১৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৩, ১৩ মে ২০২৫

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রহমতখালী খাল, বর্ষায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা

ছবিঃ সংগৃহীত

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল। দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি হওয়ায় খালটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অসচেতনায় খালটি ময়লা-আবর্জনা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। তবে, খালটি দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে খালের লক্ষ্মীপুর অংশ ঘুরে ভয়াবহ দখল আর দূষণের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর পৌর বাজার, মাদাম, ঝুমুর, জকসিন, মান্দারী, বটতলী ও চন্দ্রগঞ্জ বাজার অংশে খালের দুইপাশে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। আর এসব বাজারের অংশে প্লাস্টিক বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ ও ভরাটের চিত্র দেখা গেছে। এসব কারনে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 
 

এক সময় রহমতখালী নদী বা রহমতখালি খাল বাংলাদেশের একটি ছোট নদী। নদীটির শুরু ফেনী থেকে, আর শেষ লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটের মেঘনা নদীর মুখে। রহমতখালীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ মাইল বা ১৩৭ কিলোমিটার। প্রশস্ত ছিল প্রায় ১২৮ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী খালটির ৪০ কিলোমিটার লক্ষ্মীপুর অংশে। এটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত।  

জানা গেছে, গেল বর্ষা মৌসুমে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে রহমতখালী খালের গভীরতা কমে যাওয়া, দুই পাড় সংকুচিত হওয়া, খাল দখল, দূষণ, বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার, নীচু এবং সরু ব্রিজকে দায়ি করা হয়েছে। এছাড়া রহমতখালী থেকে বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত হওয়া ছোট ছোট সংযোগ খালগুলো দখল ও ভরাট হওয়াকেও দায়ি করা হয়।
আরও জানা গেছে, বন্যার সময় তাৎক্ষণিক ছোট ছোট প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলেও দখলমুক্ত, নাব্যতা বাড়ানো, বর্জ্য অপসারণ কিংবা পানি প্রবাহের ব্যবস্থা বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কোন প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বাজারের সব ধরণের বর্জ্য এবং প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে খালে। খালের দুইপাশে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্যও যাচ্ছে খালে। আবার কোন কোন বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যের পাইপলাইনও খালের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। খালের পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছিসহ কীটপতঙ্গ জম্ম নিচ্ছে। এছাড়া খালের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য ভরে গেছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এবং আইন প্রয়োগ করে খালের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

'সবুজ বাংলাদেশ' নামে পরিবেশবাদি একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. শাহীন আলম বলেন, লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল দখল এবং দূষণের কবলে পড়ে তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। আর বাজারকেন্দ্রীক ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে। বাজারের সব ধরণের বর্জ্য এবং প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে খালে। খালের দুইপাশে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্যও যাচ্ছে খালে। আবার কোন কোন বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যের পাইপলাইনও খালের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, দখল এবং দূষণরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পূর্বে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি। গেল বন্যায় খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর না হওয়ায় এবারও জলাবদ্ধতা এবং বন্যার আশঙ্কা করছি। 

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবু তাহের বলেন, এক সময় এ খালের জৌলুশ ছিল। পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করতো। পানি ছিল স্বচ্ছ। প্রচুর মাছ ছিল। এগুলো এখন শুধু ইতিহাস। খালের বর্তমান পরিস্থিতি একেবারে নাজুক। 
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রহমতখালীর পৌরসভা ৮ কিলোমিটার অংশে দখল, দূষণ এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরও বলেন, আসন্ন বর্ষায় জলবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আগামী জুনের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

আসিফ

×