
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজে ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়’ বাউবি শাখায় ২০২২ সেশনের বি.এ/বি.এস.এস কোর্সে ১ম থেকে ৬ষ্ঠ শিক্ষাবর্ষে ফরম ফিলাপের ভর্তি ফি জমা না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের সামনেই অফিস সহায়ক মোহসিন ওরফে কদর আলী ৪৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফরম ফিলাপের জন্য প্রায় ৩ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা গত বছরের ২২ শে নভেম্বর কেন্দ্রে এসে জানতে পারেন তাদের ফরম ফিলাপ করা হয়নি। যে কারণে কারো হাজিরা খাতায় নাম নেই। বিষয়টি জানতে পেরে তারা কান্নায় ভেঙে পরেন।
হালুয়াঘাট কেন্দ্রে সে সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের সে সময়ের চলতি রুটিনে থাকা আঞ্চলিক পরিচালক মঞ্জুরুল হক। সে সময় তিনি সকল শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে তাদের আবেদন করতে বলেন এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হালুয়াঘাট শহীদ স্মৃতি সরকারি ডিগ্রি কলেজের সমন্বয়কারী মির্জা মো. জহুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা কম্পিউটারে টাইপকৃত প্রত্যয়নপত্রে নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। যা চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। ২৮ এপ্রিল বাউবির ফলাফল দেওয়া পর ঐ শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন তাদের ফলাফল আসেনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের ফরম ফিলাপের টাকা জমা না দিয়ে হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজের অফিস সহায়ক মোহসিন ওরফে কদর আলী আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সালমা ইয়াছমিন বলেন, ৫ম ও ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের জন্য ৮ হাজার ৪শত টাকা আমি ফরম ফিলাপের জন্য মোহসিন এর কাছে জমা দেই। পরীক্ষার সময় হলে এসে জানতে পারি, আমাদের টাকা জমা না দিয়ে মোহসিন সেটি আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত আঞ্চলিক পরিচালক মঞ্জুরুল হক স্যার আমাদের দিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। আমি ঢাকা থেকে এসে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন আমার ফলাফল আসেনি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অপর শিক্ষার্থী মোহতি মোমেনীন চম্পা বলেন, আমি ফরম ফিলাপের জন্য মোহসিনের কাছে ৭ হাজার ৫শত টাকা জমা দেই। পরে একদিন ময়মনসিংহ থেকে আমার কাছে কল আসে। সেখানে বলা হয় আমার ফরম ফিলাপ হয়নি। পরে আমি মোহসিনের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, টাকা জমা হয়ে যাবে। পরে আমি পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানতে পারি, ফরম ফিলাপের টাকা জমা দেওয়া হয়নি। পরে মঞ্জুরুল হক স্যার আমাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। পরীক্ষায় ফলাফল না আসায় আমি মানসিক ভাবে খুব চাপে রয়েছি। শুধু আমি নই, আমার মতো সকল শিক্ষার্থীদের একই অবস্থা।
শুধু শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ নয়, অভিযোগ রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক কতিপয় কর্মকর্তা বেআইনিভাবে হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজে ‘বিএ’ ২০১৯ সালে স্ট্যাডি সেন্টারের অনুমোদন দেন। অথচ ২০১২ সালে হালুয়াঘাট শহীদ স্মৃতি সরকারি ডিগ্রি কলেজ ‘বিএ’ স্ট্যাডি সেন্টার অনুমোদন পায়। বাউবি আইনে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে কোন স্ট্যাডি সেন্টার থাকলে অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেটির অনুমোদন পায় না। শুধু তাই নয় এতো অভিযোগের পরেও হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজ সেন্টারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বাউবি।
অভিযোগ রয়েছে, হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয় স্টাডি সেন্টারটি টিকিয়ে রাখতে নতুন করে ভুয়া ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি দেখিয়েছে। এতে ছাত্র/ছাত্রীরা হতাশাগ্রস্ত। গত বছরের ছাত্র/ছাত্রীরা কীভাবে আবার ওই কলেজের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সেটি নিয়েও চলছে আলোচনা।
শহীদ স্মৃতি সরকারি ডিগ্রি কলেজের সমন্বয়কারী মির্জা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি মঞ্জুরুল স্যারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মোহসিন বলেন, আমি ইতিমধ্যে কয়েকজনের ফরম ফিলাপ করে দিয়েছি। টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
সে সময়ের আঞ্চলিক পরিচালকের চলতি রুটিনে থাকা যুগ্ম আঞ্চলিক পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে আমার অফিস থেকেই সকল শিক্ষার্থীদের ফোন দেই। পাশাপাশি হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজের অধ্যক্ষ ও সমন্বয়কারী স্নিগ্ধা হাওলাদারকে লিখিতভাবে জানতে চাই। তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অনুমতি দেননি বলে জানান। অল্প দূরত্বে কীভাবে ২টি স্ট্যাডি সেন্টার হয় সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা অনুমোদন দেন তারা বলতে পারবেন।
আদর্শ মহিলা (ডিগ্রি) কলেজের অধ্যক্ষ ও সমন্বয়কারী স্নিগ্ধা হাওলাদার বলেন, আগে কলেজের গভর্নিং বডির কমিটি ছিল না। এখন কমিটি হয়েছে। আমরা শীঘ্রই বসে অফিস সহায়কের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ফলাফল কেন আসলো না, সেটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছি।