
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ সিরাজ গাজী প্রায় ৩০ শতক জমি লীজ নিয়ে আবাদ করেন। মার্চ মাসে আবাদকৃত জমিতে ইউনাইটেড কোম্পানির মধুমালা, ব্ল্যাক কিং ও ইয়েলো বার্ড জাতের তরমুজ চারা রোপণের জন্য কিছুদূর পরপর তৈরি করেন বেড। ওই বেডে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর চারা রোপণের স্থানে ফুটো করে তা রোপণ করা হয়। চারা কিছুটা বড় হলে বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচায় চারা তুলে দেওয়ার কাজ করা হয়।
বর্তমানে মাচায় মাচায় হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ ঝুলছে। এরমধ্যে বাহিরে হলুদ ভিতরে লাল, বাহিরে কালো ভিতরে লাল ও বাহিরে সবুজ ভিতরে হলুদ রঙের তরমুজ। এসবের ফলন এতটাই ভালো হয়েছে যে, দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। আর খেতেও রসালো ও সুস্বাদু এই তরমুজ। বিক্রি করে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এখানে চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।এসব তথ্য নিশ্চিত করে কৃষক মোঃ সিরাজ গাজী জানান, প্রথম তরমুজ চাষ করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। ক্ষেতে প্রায় ৬০০ গাছে ৮০০ তরমুজ আছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে এসব তরমুজ। তাই বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজের প্রতি কেজির দাম প্রায় ৭০ থেকে একশ টাকা। সে হিসেবে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী। সার্বিকভাবে পরামর্শ প্রদান করায় তিনি (কৃষক সিরাজ গাজী) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পশ্চিম জয়পুর গ্রামে ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়- সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ। ছোট-বড় তরমুজে নুয়ে পড়েছে মাচা। দেখতে যেন হলুদ, সবুজ ও কালোর সমারোহ। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পোকা দমনে ব্যবহার হয়েছে হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ। তাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এ তরমুজ চাষ দেখতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় মোটিভেশনের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন মাচায় বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষ করেন কৃষক সিরাজ গাজী। তিনি তরমুজ আবাদ করে সফল। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছি। তার তরমুজ চাষে সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও আমার কাছে পরামর্শ চাইছেন। আমি পরামর্শ দিয়েছি। এক কথায় হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ চাষে সিরাজ গাজীর বাজিমাত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বাহুবলে ছিল না তরমুজ চাষ। আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়েছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ চাষ করেন সিরাজ গাজী। তার জমিতে চাষকৃত হলুদ, সবুজ ও কালো তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রমাণ হলো হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ চাষে বাহুবলের মাটি বেশ উপযোগী। এ জাতের তরমুজ রসালো ও সুস্বাদু।
রাজু