
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার এক-পঞ্চমাংশ মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি, এবং পুরো অঞ্চলটি ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষে ঢুকে পড়ছে—জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে ইসরায়েল খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সাহায্যের উপর অবরোধ জারি রাখার পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ পেল।
ব্লকেডের ভয়াবহ চিত্র
চলমান ইসরায়েলি অবরোধ ও হামলার কারণে সাধারণ মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংস্থান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইউনাইটেড নেশনসের ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) এর তথ্য অনুযায়ী, গাজার গোটা জনগোষ্ঠী বর্তমানে ‘উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’-য় ভুগছে এবং পরিস্থিতি দ্রুতই দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে।
IPC জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী প্রায় শেষ হয়ে এসেছে বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। সীমিত যা কিছু আছে, তার দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা সম্ভব নয়। গমের দাম বেড়েছে ৩০০০ শতাংশ পর্যন্ত।
ইসরায়েলি ব্যাখ্যা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল সরকার বলছে, তারা হামাসকে চাপ দিতেই এই অবরোধ চালাচ্ছে যাতে জিম্মিদের মুক্তি পাওয়া যায়। তবে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল এই অবরোধের মাধ্যমে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ‘ক্ষুধা’ ব্যবহার করছে—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখপাত্র ডেভিড মেন্সার দাবি করেছেন, “গাজায় কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। যদি ক্ষুধা থাকে, তা হামাসের কারণে।” অন্যদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি CNN-কে বলেছেন, “স্পষ্টতই গাজায় একটি মানবিক সংকট চলছে।”
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ভয়াবহ পরিস্থিতি
IPC এর হিসাব অনুযায়ী, মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজার প্রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ—যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ—‘বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটের’ মুখে পড়বে।
এই সময়ে তিনটি মানদণ্ড পূরণ হলে ‘দুর্ভিক্ষ’ ঘোষণা করা হয়:
- ১) ২০ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটে,
- ২) ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে,
- ৩) প্রতি ১০ হাজারে অন্তত ২ জন প্রতিদিন অপুষ্টি বা সংক্রামক রোগে মারা যায়।
প্রথম শর্ত ইতোমধ্যেই পূরণ হয়েছে।
বিশেষ ঝুঁকিতে শিশু ও গর্ভবতী নারী
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল ২০২৫ থেকে মার্চ ২০২৬ সালের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে। একই সময়ে ১৭ হাজারের মতো গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে।
অসহায় পরিবারগুলো ঘাস, পশুখাদ্য ও দূষিত পানি খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। শিশুদের দুধ খাওয়াতে না পেরে অনেক মা দিশেহারা। এক গাজাবাসী মা ইমরান রজব CNN-কে জানান, তিনি আবর্জনা থেকে সংগ্রহ করা ময়লা ময়দা দিয়ে রুটি বানাচ্ছেন, যা খেয়ে তার ছয় সন্তান বমি করে।
জাতিসংঘের খাদ্য সাহায্য থেমে আছে
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তারা দুই মাসের জন্য পুরো গাজা জনগণের খাবার প্রস্তুত রেখেছে, কিন্তু ইসরায়েল সীমান্তে আটকে রাখায় তা প্রবেশ করাতে পারছে না। প্রায় ৩,০০০ সাহায্যবাহী ট্রাক এখনো সীমান্তেই আটকে আছে।
Cindy McCain, WFP-এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, “গাজার মানুষ না খেয়ে মরছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা মানে অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
এসএফ