ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সাটুরিয়ায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার পথে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১৩ মে ২০২৫

সাটুরিয়ায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার পথে

দোকানের সামনে এক উপকারভোগী নারী

সাটুরিয়া উপজেলায় ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে প্রায় ছয় বছর আগে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এই ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিতকরণ প্রকল্পের আওতাধীন সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৭০ জন ভিক্ষুককে উন্নত জাতের ছাগল, ভ্যান, সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, বাঁশের সামগ্রী, পানের দোকান, চায়ের টং ও মুদি মালামাল বিতরণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

তবে মাঠ পর্যায়ের চিত্র হতাশাজনক। উপকারভোগীদের অভিযোগ, বিতরণ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়নি। 
উপকারভোগীদের পুনর্বাসন পরবর্তী জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি, পুনর্বাসন কমিটির সদস্যদের মধ্যেও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। ফলে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন অনেকেরই পূরণ হয়নি।
সাটুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নারা গ্রামের মৃত গেদু মিয়া ছিলেন এই প্রকল্পের একজন উপকারভোগী। ভিক্ষা ছেড়ে তিনি একটি মুদি দোকান পেয়েছিলেন তিনি। গেদু মিয়া মারা গেছেন প্রায় দুই বছর ধরে। গেদু মিয়ার স্ত্রী ভানু বেগম আক্ষেপ করে বলেন, সরকারিভাবে একটি দোকান ঘরসহ হাজার দশেক টাকার মতো মুদি মাল দিয়েছিল সমাজসেবা অফিস।

চাল, ডাল, তেল, সাবান, বিস্কুট, চিপস ছিল সেই তালিকায়। প্রথমে একবার অল্প পরিমাণে কিছু মোদী মালামাল দেওয়ার পর আর কেউ খোঁজখবর নেয়নি। আজ তার সেই লাল-সবুজ টিনের দোকানটি বন্ধ। বালিয়াটি গোপালনগরের ভিক্ষুক আইয়ুব জানান, উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে অল্প কিছু টাকার মুদি মাল কিনে দেয়া হয়েছিল। পুঁজি শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি ফের ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, একটি দোকান চালাতে হলে লক্ষাধিক টাকা লাগে।

শুনেছি আমাদের জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল, কিন্তু অর্ধেকেরও কম টাকা দিয়ে তারা নিজেরাই মাল কিনে দিয়েছিল। কয়দিন ব্যবসা করার পর আর পুঁজি বাট্টা না থাকায় ব্যবসা বাদ দিয়েছে। ফুকুরহাটি ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন জানান, ২০ হাজার টাকার মাল দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি হাতে পেয়েছেন ৬-৭ হাজার টাকার সমমূল্যের পণ্য। প্রথমবারই কিছু মালামাল কিনে দেওয়ার পর সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আর কোন পরামর্শ বা কেউ খোঁজ খবর নেননি। 
এ ছাড়াও দোকান চালানোর বিষয়ে কেউ কোনো পরামর্শ দেয়নি। দায়সারাভাবে একটি টিনের ঘর তৈরি করে সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ বলে জানান তিনি।
এ ছাড়াও তিল্লি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৩ জন ভিক্ষুককে উন্নত জাতের ছাগল দেওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী এসব বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ উপকারভোগীর ঘরে সেই ছাগল আর নেই। সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭০ জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসনের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে চলতি বছর পর্যন্ত সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সিরাজউদ্দিন ভিক্ষুক পুনর্বাসনে সঠিক তথ্যর হিসাব দিতে পারেননি। তিনি বলেন, কাকে কত টাকা দিয়েছি তা সঠিক আমার জানা নেই। 
সাটুরিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো  অভিযোগ পায়নি। তবে অভিযোগ পেয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×