ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

উল্লাপাড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭৭ হাজার পশু

নিজস্ব সংবাদদাতা, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১৩ মে ২০২৫

উল্লাপাড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭৭ হাজার পশু

ঈদ সামনে রেখে বাণিজ্যিক খামারের পাশাপাশি ছোট ছোট অসংখ্য খামার গড়ে ওঠে

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছর পশু বেচাকেনার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়। খামারিরা ঈদের তিন থেকে চার মাস পূর্ব থেকেই কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করতে থাকেন। ঈদে ক্রেতা চাহিদা অনুসারে এসব পশু প্রস্তুত করা হয়। ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ থাকে দেশীয় জাতের ষাঁড় গরুর প্রতি। খামারিরা ছাড়াও কৃষকরা বাড়তি অর্থ উপার্জনের আশায় ঈদে বিক্রির জন্য গরু পালন করে থাকে।

অনেকে দিনমজুরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ব্যাংক, এনজিও থেকে লোন নিয়ে পশু পালন করেন। ঈদ উপলক্ষে বাণিজ্যিক খামারের পাশাপাশি ছোট ছোট অসংখ্য খামার গড়ে ওঠে। প্রতিবছরের মতো এবারও উল্লাপাড়া উপজেলার খামারি ও কৃষকরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন।
ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে গরুর যতœ নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও কৃষকরা।  তবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু পালনে খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। 
বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে ওঠা খামারের মালিকরা চিন্তায় পড়েছেন ভারত থেকে অবৈধ পন্থায় গরু আমদানি হলে তাদের বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। এ চিন্তার বাইরে নেই প্রান্তিক কৃষকরাও। তারা ব্যাংক এনজিও থেকে লোন নিয়ে গরু পালন করে ঈদে বিক্রি করে ঋণ শোধের পাশাপাশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন। ভারতীয় গরু আমদানি হলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর এ উপজেলায় তিন হাজারের বেশি খামারি কোরবানির পশু প্রস্তুত করছেন। মূলত যার গোয়ালে অন্তত ৫টি গরু-মহিষ আছে, তাকেই খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট সাড়ে ৭৭ হাজার গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর উল্লাপাড়ায় ১১ হাজার কোরবানির পশু কম রয়েছে। তবে প্রস্তুতকৃত গবাদিপশু উপজেলার চাহিদার তুলনায় দ্বিগুন। এসব পশু উল্লাপাড়ার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ২৯ হাজার, ছাগল প্রায় ৪২ হাজার ও ভেড়া সাড়ে ছয় হাজার। 
অন্যান্য বছরের মতো এবারও উপজেলার বড়হর মোহনপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছে খামারিরা। বড়হর ইউনিয়নের খামারিরা অধিক ওজনের গরুও পালন করেছেন যা দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটে বিক্রি করা হবে। 
সরেজমিনে বড়হর ইউনিয়নের পশ্চিম মৈত্রীবড়হর গ্রামে কয়েকটি খামারে দেখা গেছে, খামারগুলোতে দেশীয় ষাঁড়, শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে দেশী ষাঁড়ের সংখ্যা বেশী। খামারিরা কোরবানির গরুকে দেশীয় খাবার বেশী খাওয়াচ্ছেন। খাবার খাওয়ানো ছাড়াও নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হচ্ছে। এছাড়া তীব্র গরমে গরু দিনে একাধিকবার গোসল করানো হচ্ছে। সব মিলে কোরবানিকে কেন্দ্র করে খামারিদের ব্যস্ত সময় কাটছে। 
খামারি মমিনুল হক লিটন বলেন, এবার তার খামার থেকে কোরবানিযোগ্য দেশীয়সহ বিভিন্ন জাতের শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। সর্বনিম্ন দেড় লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে তার খামারে। এসব গরু বিভিন্ন হাটে ও খামার থেকে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এবার গো খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিটি খাদ্যেরই দাম বেড়েছে। আমরা ব্যাংক লোন করে ঈদে বিক্রির জন্য গরু পালন করেছি। যদি এবার ভারত থেকে গরু চোরাই পথে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে তাহলে আমরা লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। 
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ এমএ মতিন বলেন, কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে এবারও উল্লাপাড়ার খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা গরু প্রস্তুত করেছেন। অধিকাংশ গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এসব গবাদিপশু এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের  বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে।  আমরা খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের গরু মোটাতাজাকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত পরামর্শ প্রদান করছি।

×