
ছবিঃ সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিগত হাসিনা সরকারের তিস্তা নদী এবং অন্যান্য পানি ভাগাভাগি চুক্তির বিষয় নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিগত সরকার চীনের প্রকল্পের তুলনায় ভারতের প্রকল্পকেই প্রাধান্য দিয়েছে, যা বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে পানি সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে। তিনি ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন, যা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতিসংঘে এক গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে ভারতের কাছ থেকে আদায় করেছিলেন। চুক্তিটি গ্যারান্টি এবং আর্বিট্রেশন ক্লজসহ ছিল, যা বাংলাদেশের পানির অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল। তবে, তিনি বলেন, বিগত হাসিনা সরকার এই ধরনের আর কোন চুক্তি অর্জন করতে পারেনি এবং আগামী বছর এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক স্তরে দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশর দাবি তুলে ধরা। নতুন চুক্তিতে গ্যারান্টি এবং আর্বিট্রেশন ক্লজ থাকতে হবে, নাহলে এর কোন মূল্য থাকবে না।”
তিস্তা নদী সম্পর্কে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বহু বছর ধরে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী চুক্তি হয়নি। ভারত পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কথা বলে এই চুক্তি স্থগিত রেখেছে, তবে বাংলাদেশের দাবি হলো, দেশটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ন্যায্য চুক্তির অধিকারী।
এদিকে, চীন সম্প্রতি বাংলাদেশকে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলারের একটি মাল্টিপারপাস প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় বৃহৎ জলাধার নির্মাণ, নদী খনন এবং পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে, যা উত্তরাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
“যদি চীনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি তিস্তা নদীর পানি সংকট কিছুটা সমাধান করতে সক্ষম হবে এবং উত্তরাঞ্চলের পরিবেশ ও অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে,” বলেন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, “চীনের প্রস্তাবের পর ভারত সরকার দ্রুত জেগে ওঠে এবং তারা বলে যে তারা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবে, তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতারা বিভক্ত যে কোন দেশের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত।”
বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের প্রকল্পের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলো এবং চীনের প্রস্তাবকে তেমন গুরুত্ব দেয় নি, জানান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “বিগত হাসিনা সরকারের এই মনোভাব দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে ভারতের প্রতি এক ধরনের আনুগত্য প্রদর্শন হিসেবে প্রমাণিত হয় ।”
আহমেদ আরও উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়, তাদের জনপ্রিয় সমর্থন কম থাকলেও আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের দাবি তুলে ধরতে তারা যদি আরও শক্তিশালী ভূমিকা নেয়, তবে বিষয়টি সমাধান হতে পারে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যে, “বাংলাদেশের জনগণের দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃঢ় অবস্থান নিন।”
শেষে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দিনে পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করবে।
মারিয়া