
ছবিঃ সংগৃহীত
ভারতের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘাতে বিএনপি অন্তর্বর্তি সরকারের শান্তি কামনা এবং এর দ্রুত অবসানের দাবি করেছে। তবে, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হলো তাতে কোন পক্ষ অবলম্বন করেনি, কিন্তু মন্তব্যগুলো যদি দেখেন তো দেখবেন ভারতের মিডিয়া পাকিস্তানকে তো যেভাবে তুলোধুনা করছে সাথে বাংলাদেশকে নিয়েও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশও টেনে আনা হচ্ছে। অবশ্য তাদের নিজেদের মানুষও বলে গদি মিডিয়া।সামাজিক গণমাধ্যমে কিছু গোষ্ঠী দাবি করছে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা করেছে, কিন্তু তাদের কথায় এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাচ্ছে যে "বাংলাদেশের হৃদয়ে এখনো পাকিস্তান রয়েছে", যা একটি রূপক অর্থে বোঝানো হচ্ছে।
রিজভী বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের অপপ্রচার তুলে ধরে বলেন, “ ভারতের মিডিয়া বলছে এটা স্পষ্ট যে তাদের মধ্যে একটি পাকিস্তান রয়েছে।" যখন এই মানসিকতা থাকবে, তখন কীভাবে সমমর্যাদা নিয়ে কোন কিছু আশা করা যায়? প্রশ্ন করেন রিজভী।
ভারতের আগ্রাসনের দিকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ১৯৭২ সালের পর থেকে ভারতের আক্রমণাত্মক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, মাওলানা হামিদ খান ভাসানী এবং অন্যান্য বামপন্থী নেতারা ভারতের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, তবে পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানও ভারতের সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নেয়ার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। এর পরবর্তী সময়ে, ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা বাংলাদেশে পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৭ সালে পানিমন্ত্রী বিএম আব্বাসের নেতৃত্বে সই হওয়া চুক্তি ছিল অত্যন্ত প্যাট্রিয়টিক এবং এটি বাংলাদেশের পানি অধিকার সুরক্ষায় একটি যুগান্তকারী চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। তবে, তিনি অভিযোগ করেন যে এরপর ভারতের সঙ্গে আলোচনা শিথিল হয়ে গেছে এবং একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, "ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব এখনও বাংলাদেশে স্পষ্ট। যমুনা, তিস্তা ও অন্যান্য নদী শুকিয়ে গেছে এবং একাধিক এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফারাক্কার কারণে আর্সেনিক মিশ্রিত পানি প্রতিদিন ব্যবহার হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।"
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের প্রতি অতিরিক্ত সমর্থন দেখানোর কারণে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। রিজভী বলেন, "ভারত তার একতরফা পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং তা বাংলাদেশেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।"
রিজভী তার বক্তব্যে বিগত শেখ হাসিনার সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, "তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করেছেন।" বিশেষ করে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সুন্দরবনের কাছাকাছি অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
রিজভী বলেন, "এই ধরনের প্রকল্পগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এর ফলে সুন্দরবনসহ আশপাশের নদীগুলোর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।"
এছাড়া, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তিস্তা নদী, যমুনা নদী, পশুর নদী এবং অন্যান্য নদীকে টক্সিক করার কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে।"
রিজভী সরকারের পানি সংকটের সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, "আমরা যদি ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আগে যেমন সোচ্চার ছিলাম, তেমনি এখনো আমাদের উচিত পানির ন্যায্য ভাগ নিশ্চিত করতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।"
মারিয়া