ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

‘রিটার্নিং টু লার্নিং’প্রকল্প

প্রায় শতভাগ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ফিরেছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:০২, ১৩ মে ২০২৫

প্রায় শতভাগ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ফিরেছে

ছবি: জনকণ্ঠ

করোনা মহামারির কারণে ঝরে পড়া প্রায় ২৫ হাজার শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির ‘রিটার্নিং টু লার্নিং’ (আরটিএল) প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫টি এক-কক্ষবিশিষ্ট বিদ্যালয়ে 'এক্সিলারেটেড কোর্সের' মাধ্যমে মহামারির সময় শিশুদের শিখন ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। এই কোর্স সম্পন্নকারী প্রায় শতভাগ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং লালমনিরহাট জেলায় প্রান্তিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে হেম্পেল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে ১২ মে ২০২৫ তারিখে ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত শেয়ারিং সেশনে প্রকল্পের মূল তথ্য, অভিজ্ঞতা এবং সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মিরাজুল ইসলাম উকিল। ব্র্যাকের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমদ; প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক শিকদার, এবং ব্র্যাক ইউরোপ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা রোজি উইলিয়ামস।

সমাপনী গবেষণায় দেখা গেছে, ‘এক্সিলারেটেড কোর্স’ সম্পন্নকারী ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী পুনরায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ফিরে এসেছে। কুড়িগ্রামে ২০২০ সালে যেখানে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ছিল ২৩.৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.১৬ শতাংশে; যা জাতীয় গড় ১৩.১৫ শতাংশের কাছাকাছি।

প্রকল্পের মূল্যায়নে আরও উঠে এসেছে যে, শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ইংরেজিতে ৩৩ এর নিচে নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীর হার ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

প্রধান অতিথি মাসুদ আকতার খান বলেন, “এতদিন আমরা মূলত মেয়ে শিশুদের শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছি। এখন সময় এসেছে ছেলে শিশুদের দিকেও সমানভাবে নজর দেওয়ার। তবে সামনের বড় চ্যালেঞ্জ হলো গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা।”

বিশেষ অতিথি মিরাজুল ইসলাম উকিল বলেন, সরকার এখন তিনটি নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে—স্কুল ফিডিং চালু, প্রাথমিক স্তরে বৃত্তি পুনরায় চালু এবং দুই শিফটের সব বিদ্যালয়কে এক শিফটে রূপান্তর। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমে যাবে।”

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে শুধু প্রকল্পনির্ভর নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর জন্য স্থানীয় সরকার, অভিভাবক, শিক্ষক এবং কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। সবাই একসাথে কাজ করলে একটি সময়োপযোগী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কাওসার/শহীদ

×