ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগ নেতার মামলায় তিন বছর ধরে ঝুলে আছে কুষ্টিয়ার মহাসড়ক

সাগর হোসেন, কুষ্টিয়া 

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ১৩ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগ নেতার মামলায় তিন বছর ধরে ঝুলে আছে কুষ্টিয়ার মহাসড়ক

ছবি: সংগৃহীত

এক আওয়ামী লীগ নেতার দায়ের করা মামলার কারণে গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের ৩৫০ মিটার অংশ। প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মহাসড়কের এই অংশের নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ স্থগিত থাকায় ওই অংশটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

প্রায় ৬০০ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বর্তমানে সড়কের এক পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে যেমন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট এবং সেখান থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি দুই ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ফুটপাত, নালা, বিভাজক এবং গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জহিরুল লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায়। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বহিবারে সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি।

জানা গেছে, কাজ শুরুর পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ২০২১ সালের ১২ মে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দিয়ে দাবি করেন, রাস্তা তার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তিনি একই বছরের শেষদিকে কুষ্টিয়া সহকারী জজ আদালতে এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০২২ সালে হাইকোর্ট তার দাবিকৃত ৩৫০ মিটার জায়গার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা পরবর্তীতে একাধিকবার বহাল রাখা হয়।

এদিকে, মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত অপর ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ ইতোমধ্যে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড সম্পন্ন করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও চালকদের অভিযোগ—আওয়ামী লীগ নেতার মামলার কারণে বটতৈল থেকে মজমপুর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরিত্যক্ত রাস্তায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে রাস্তার এক পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে, যা প্রায়শই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর রেজাউল হক আত্মগোপনে চলে যান। তিনি একাধিক মামলার আসামি, এবং বর্তমানে তার সম্পর্কে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছেন না। জানা যায়, তিনি সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠজন এবং প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, "তিন বছর ধরে রাস্তাটি পরিত্যক্ত। রেজাউল হকের মামলা যেন মরণফাঁদ। এই এক মামলার কারণে মানুষের প্রাণ ঝরছে। অথচ দেখার কেউ নেই। আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাই।"

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, "হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে ৩৫০ মিটার অংশের কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আইনি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।"

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেডের মালিক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শহীদ

×