ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

গরমে হিট স্ট্রোক কেন হয়? কীভাবে রক্ষা পাবেন

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ১১ মে ২০২৫

গরমে হিট স্ট্রোক কেন হয়? কীভাবে রক্ষা পাবেন

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে আমাদের শরীরের জন্য হিটস্ট্রোক সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। এটি এক ধরনের শারীরিক অবস্থান যেখানে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায় এবং শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটি কাজ করে না। এই প্রতিবেদনটি গরমে হিটস্ট্রোক কেন ঘটে এবং এটি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানাবে।

হিটস্ট্রোক কী?
হিটস্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনটাইট বা ৪০  ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি হয়ে যায়। এ অবস্থায় শরীর ঘাম ত্যাগ করতে পারে না এবং তাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, যা গুরুতর শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি মস্তিষ্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।

হিটস্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণগুলো
১. প্রচণ্ড তাপদাহ
গরমে বাইরের তাপমাত্রা বেশি হলে শরীর অতিরিক্ত তাপ গ্রহণ করে। যদি শরীর ঘামতে না পারে বা ঘাম থেকে তাপ সঠিকভাবে বের হয়ে না যায়, তবে তাপ শরীরে জমে যায় এবং হিটস্ট্রোক হতে পারে।

২. বয়স ও শারীরিক অবস্থা
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি বাচ্চা ও বয়স্ক ব্যক্তিরা হিটস্ট্রোকের জন্য বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যারা হৃদরোগ, কিডনি রোগ বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত, তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

৩. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম
গরম আবহাওয়ায় অতিরিক্ত শারীরিক কাজ করা বা ব্যায়াম করলে শরীর অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয়, যা দ্রুত হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত দুপুরের গরমে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. ডিহাইড্রেশন (পানির অভাব)
গরমে শরীর থেকে প্রচুর পানি হারিয়ে যায়, এবং পর্যাপ্ত পানি না পেলে শরীর সঠিকভাবে ঠান্ডা হতে পারে না। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো
হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত দ্রুত দেখা দেয়-
* তীব্র মাথাব্যথা

* অতিরিক্ত ঘাম না হওয়া

* শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

* দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস

* শুষ্ক ত্বক

* বমি বা বমির অনুভূতি

* অবসাদ বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি

হিটস্ট্রোকের প্রতিরোধের উপায়

১. পানি পান করুন
ডিহাইড্রেশন এড়াতে নিয়মিত পানি পান করুন। গরমের দিনে বিশেষভাবে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

২. যতটুকু সম্ভব রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন
প্রচণ্ড রোদে বের হওয়া থেকে বাঁচুন, বিশেষত দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। এই সময় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।

৩. এয়ার কন্ডিশনার বা পাখার ব্যবহার করুন
যতটুকু সম্ভব ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এয়ার কন্ডিশনার বা পাখার ব্যবহার করুন। বাইরে বের হলে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করুন।

৩. হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
সুতি কাপড় পরুন যা শরীরকে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য উপযুক্ত রাখবে। অন্ধকার রঙের পোশাক পরার থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি তাপ শোষণ করে।

৫. সতর্কতা অবলম্বন করুন শারীরিক পরিশ্রমের সময়
গরমের দিনে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। যদি শরীরের অবস্থার উন্নতি না হয় তবে অবিলম্বে বিশ্রাম নিন এবং ঠান্ডা পানীয় পান করুন।

কী করলে হিটস্ট্রোকের সময় সাহায্য পাওয়া যাবে?
যদি কোন ব্যক্তি হিটস্ট্রোকের শিকার হন, তবে দ্রুত তাকে একটি ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান, তার শরীরে ঠান্ডা পানি স্প্রেস করুন, অথবা বরফের সেঁক দিন। সম্ভব হলে, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে হিটস্ট্রোক প্রাণঘাতী হতে পারে।

সজিব

×