
আপনার আশপাশে এমন কাউকে দেখেছেন, যিনি একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে যাচ্ছেন, অথচ বাকিরা আটকে আছেন একই জায়গায়?এই দৃশ্য দেখে অনেকেই বলেন, 'ভাগ্য ভালো', কিংবা 'চেনাজানা আছে নিশ্চয়ই'। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলছে, এমন কিছু অভ্যাস আছে যা ধারাবাহিক ক্যারিয়ার সাফল্যের আভাস দেয়।
এই গুণগুলো হুট করে গড়ে ওঠে না,এগুলো সচেতন সিদ্ধান্ত, যা সফল মানুষদের অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। আপনি যদি পেশাগত জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে চান বা দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় আটকে আছেন বলে মনে হয়, তাহলে এই সাতটি অভ্যাস আপনার পথ দেখাতে পারে।
চমকপ্রদ বিষয় হলো এই অভ্যাসগুলো রেজুমে বা ডিগ্রির চেয়েও বেশি শক্তিশালী।চলুন, এক নজরে দেখে নিই সাফল্যের পেছনের আসল চালিকাশক্তি কী কী:
১. লক্ষ্য নির্ধারণে থাকে স্পষ্টতা
অনেকেই বলেন, ‘ভালো চাকরি চাই’ বা ‘বেতন বেশি চাই’। কিন্তু যারা সফল হন, তারা জানেন—সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এগোনো যায় না।
তারা ঠিক করে রাখেন, ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে তারা কী অর্জন করবেন। শুধু স্বপ্ন দেখেন না, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ছোট ছোট ধাপে এগোন।
নিজেকে চিনে নিতে পারলে লক্ষ্য নির্ধারণও সহজ হয়—নিজের শক্তি-দুর্বলতা বুঝে ঠিক করেন, কীভাবে এগোতে হবে।
যেমন, শুধু ‘বেতন বাড়াতে চাই’ বললে হবে না। বরং বলা উচিত, ‘আগামী ১২ মাসে নতুন একটি দক্ষতা শিখে অন্তত ১০% ইনক্রিমেন্ট চাই।’এভাবে চিন্তা করলে লক্ষ্যও মেলে, পথও খুঁজে পাওয়া যায়।
২. আবেগ সামলানোর দক্ষতা থাকে উন্নত
শুধু কাজ জানলেই চলে না, জানাটা কাজে লাগাতে জানাও দরকার। আর তার জন্য লাগে ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’।নিজের আবেগ বোঝা, তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়া এই গুণগুলো যারা আয়ত্ত করতে পারেন, তারাই দল পরিচালনায় পারদর্শী হন।
মনে রাখবেন, আবেগপ্রবণ হওয়া মানেই দুর্বল হওয়া নয়। বরং প্রয়োজনমতো নিজেদের অবস্থান জানানো বা দুর্বলতা স্বীকার করাও হতে পারে শক্তির প্রকাশ।যেমন, আপনি যদি বলেন, ‘নতুন সফটওয়্যারটা শিখছি, একটু সময় লাগছে’ এই স্বচ্ছতা সহকর্মীদের আস্থা বাড়ায়।
৩. সমালোচনাকেও শেখার উপায় হিসেবে দেখেন
অনেকেই সমালোচনায় চটে যান। কিন্তু সফল মানুষরা এসব কথাকে ভয় পান না। বরং নিজের কাজ আরও ভালো করার জন্য উৎস খোঁজেন সেখানেই।কোনো সহকর্মী, সিনিয়র কিংবা জুনিয়র যেই হোক, গঠনমূলক মতামত দিলে তারা গুরুত্ব দিয়ে শুনেন।
তারা প্রায়ই বলেন, ‘তুমি কী ভাবো, আমি কীভাবে আরও ভালো করতে পারি?’এই খোলা মনটাই তাদের বদলে যেতে সাহায্য করে।
৪. কাজ আর বিশ্রামের মধ্যে রাখেন ভারসাম্য
‘দিনরাত খেটে সফল হও’ এই মন্ত্রে যারা অন্ধ হয়ে থাকেন, অনেক সময় তারাই আগে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।যারা দীর্ঘমেয়াদে সফল হন, তারা জানেন কবে থামতে হবে।কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি নিজের শরীর আর মনকে বিশ্রাম দেওয়াটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।সময়মতো ঘুম, নিজের সময়, নির্দিষ্ট কাজের বাইরে নিজেকে আলাদা রাখা এই ছোট ছোট চর্চাগুলোই আগলে রাখে আপনাকে।
৫. ব্যর্থতাকে দেখেন শেখার ধাপ হিসেবে
ক্যারিয়ারে ভুল হতেই পারে কোনো প্রজেক্ট ব্যর্থ হলো, বা আপনার আইডিয়াটা গ্রহণই করল না কেউ।কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের সাফল্যের মুখ দেখেন, তাঁরা এসব মুহূর্তকে ব্যবহার করেন শেখার সুযোগ হিসেবে।
তারা প্রশ্ন করেন, ‘কী করলে ভিন্ন হতে পারত?’‘আমি কী এড়িয়ে গেছি?’নিজেকে দোষ না দিয়ে, পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেন।এভাবেই গড়ে ওঠে মানসিক দৃঢ়তা, যা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করে।
৬. সম্পর্ক গড়ে তোলেন আন্তরিকতায়
অনেকে ভাবেন, 'নেটওয়ার্কিং' মানেই কার্ড দেওয়া-নেওয়ার খেলা।কিন্তু সত্যিকারের সফল মানুষদের কাছে এটি হলো সম্পর্ক তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া,যেখানে থাকে ভরসা, সহযোগিতা আর শ্রদ্ধা।
তারা সময় দেন সহকর্মীদের, আগ্রহ দেখান পুরনো পরিচিতদের প্রতি, খোঁজ নেন অন্যদের চলার পথে।এই আন্তরিক সম্পর্কই একদিন হয়ে ওঠে পেশাগত সহায়তার বড় শক্তি।
৭. সবসময় শিখতে থাকেন, কৌতূহল ধরে রাখেন
আপনি হয়তো বর্তমানে নিজের কাজটা দারুণভাবে করছেন। কিন্তু সময় বদলায় দ্রুত, আর সঙ্গে সঙ্গে বদলায় কাজের ধরণও।যারা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখছেন চাকরি বদলাতে হোক বা নতুন কিছু শিখতে,তাদের পেছনে ফেরার প্রয়োজন হয় না।
কেউ নতুন সফটওয়্যার শিখছেন, কেউ নতুন ভাষা, আবার কেউ অংশ নিচ্ছেন লিডারশিপ ওয়ার্কশপে।এই কৌতূহল আর শেখার আগ্রহই একজন কর্মীকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত রাখে।
পেশাগত সাফল্য অনেক সময় বাইরের দিক থেকে এলোমেলো মনে হয়। কিন্তু ভেতরে থাকে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাসের শক্তি।স্পষ্ট লক্ষ্য, আবেগের ভারসাম্য, ফিডব্যাক নেওয়ার মানসিকতা, পরিশ্রম আর বিশ্রামের ভারসাম্য, ভুল থেকে শেখা, আন্তরিক সম্পর্ক এবং আজীবন শেখার আগ্রহ এই সাতটি বিষয় যদি আপনি প্রতিদিনের কাজে মিশিয়ে নিতে পারেন, তাহলে সাফল্যের পথটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়।
সূত্র:https://tinyurl.com/3f6fbc63
আফরোজা